লাফিয়ে বাড়ছে এলপিজির দাম

লাফিয়ে বাড়ছে এলপিজির দাম

মোঃ সোলায়মান মারুফ : লাফিয়ে বাড়ছে তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম। গত এক মাসেই সিলিন্ডারপ্রতি এলপিজি’র দাম প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে। জানুয়ারিতে ১২ কেজির যে সিলিন্ডার ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বেড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। তবে এলপিজি ব্যবসায়ীদের মতে, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের (বিউটেন, প্রোপেন) দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ভুক্তভোগী গ্রাহক এবং এলপিজি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এলপিজি সারাবিশ্বে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে সমাদৃ। এটি গৃহস্থালি, শিল্প, বাণিজ্য, অটোমোবাইল এবং বিভিন্ন কারখানায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এলপিজি যখন গাড়িতে ব্যবহার করা হয়, তখন একে অটো গ্যাস নামে ডাকা হয়। দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ এলপিজিই আমদানি করা হয়। জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এলপিজির বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে এর মূল্য-কাঠামো নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। গত মাসে এ নিয়ে গণশুনানি হলেও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে বিশ্ববাজারে এলপিজির কাঁচামাল বিউটেন আর প্রোপেনের দাম টনপ্রতি ২৫০ ডলারের বেশি বেড়েছে। গত জুনে টনপ্রতি যেখানে দাম ছিল ৩৩০ থেকে ৩৪০ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬শ ডলার। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও এলপিজির দাম বেড়েছে। জানুয়ারিতে কোম্পানিভেদে ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতো। গত এক মাসে তিন দফা দাম বেড়ে এখন প্রতি সিলিন্ডার এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর দাম বাড়ায় এর বিক্রিও কমেছে। তাছাড়া এলপিজির দাম পরিবহনের ওপরও নির্ভর করে। বাংলাদেশে সমুদ্রবন্দরের গভীরতা কম হওয়ায় ছোট জাহাজে এলপিজি আনা হয়। ফলে ব্যয় বেশি পড়ে। এশিয়ার বাজারে এলপিজির দাম সৌদি আরবের তেল কোম্পানি আরামকোর মূল্য-কাঠামো দ্বারা প্রভাবিত। বর্তমানে ২৯টি সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি দেশে এলপিজি আমদানি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। তবে দেশে বেসরকারি ২৮ কোম্পানির মাধ্যমেই এলপিজি সিংহভাগ সরবরাহ হয়।
এদিকে ভুক্তভোগীরা বলছেন, লাইন গ্যাসে যেখানে মাসে ৯০০ টাকা লাগে, সেখানে এলপিজিতে মাসে ২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। দাম বাড়ায় এখন ওই ব্যয় বেড়ে প্রায় তিন হাজার টাকা হয়েছে। এলপিজির দাম বেড়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে এলপিজির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে যমুনা এলপিজির পরিচালক ইয়াসিন আরাফাত জানান, এলপিজি পুরোপুরি আমদানিনির্ভর খাত। এখন বিশ্ববাজারে এর দাম বাড়ছে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীদেরও বেশি দামে এলপিজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এলপিজির মূল্য নির্ধারণে বিইআরসিকে সব ধরনের ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী জানান, গণশুনানির পরও অনেক কাজ রয়েছে। সব পক্ষের মতামত নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। বিশ্ববাজারে এর দাম ওঠানামা করে। সেটি বিবেচনায় রেখেই মূল্য-কাঠামো ঠিক করতে হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন