অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ লাইফ সাপোর্টে

অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ লাইফ সাপোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, লড়াই করে চলেছেন কিংবদন্তী ব্যাংকার ও ইকোনোমিস্ট খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।
অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ ফেব্রুয়ারী রবিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
দেশের প্রথিতযশা ব্যাংকার ও ইকোনোমিস্ট সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ গত ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা টেস্টে পজিটিভ রেজাল্ট হলে তাঁর অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে। তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মাঝে মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও পরক্ষণে তা মিলিয়ে গেছে। ২১ ফেব্রুয়ারী রবিবার দিবাগত রাত ১২ টা থেকে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করেছেন।
দেশের প্রখ্যাত ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের বর্ণাঢ্য জীবন সম্পর্কে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিওগ্রাফিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এবং পরবর্তীতে আইবিএ থেকে এমবিএ ডিগ্রী অর্জন করে প্রায় ছয় দশক ধরে তিনি ব্যাংকিং খাতে নিরলসভাবে সেবা দিয়ে আসছেন। তাঁর মাদার ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত¦ পালনের পর সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। অত:পর তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তৎপূর্বে ব্যাংকটি নানা দিক থেকে বিপন্ন ছিল। জানা যায়, তিনি কঠোর হস্তে হাল ধরে তাঁর সুদুর প্রসারী কর্ম-পরিকল্পনায় ব্যাংকটির আমূল পরিবর্তন আনেন।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ২০০০ সাল থেকে “কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলা”র ডাইরেক্টর, এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভাপতি ও ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ২০০৯ সালে খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক লাভ করেন এবং ২০১৩ সালে খান বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরী জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন।
দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি সর্বদা সততা ও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি বা মাথানত করেননি। শেয়ার বাজার নিয়ে দেশের অর্থনীতি যখন হুমকির মুখে তখন তিনি কর্তব্যে অবিচল থেকে ধৈর্য্য, সততা ও সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশবাসীর আস্থা অর্জন করেন।
আমাদের সমাজে আজ সৎ মানুষের বড় অভাব। সাগরকুলে যে সকল মৎস্যারোহী মাছ শিকার করে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ দিনের জন্য লোকালয় থেকে খাওয়ার পানি সংগে নিয়ে যায়, পানি ফুরিয়ে গেলে তাঁদের আর থাকা চলে না, ফিরে আসতে হয়। তাঁদের বক্তব্য পানির ওপরে থাকি কিন্তু সুপেয় পানির বড় অভাব। চারদিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ কিন্তু সৎ মানুষের বড়ই আকাল। সততার বুলি বক্তৃতায় যত সহজ বাস্তবে ততই কঠিন। সততার মাপকাঠিতে একটা লেবেল পর্যন্ত সৎ থাকলেও শেষ অবধি সৎ থাকতে পারিনি এমন অনেক নজির আমাদের মাঝে আছে। আবার ফিন্যান্সিয়ালি সৎ তো ইথিক্যালি অসৎ। আমার সাথে অনেকেই একমত হবেন যে, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ স্যার সর্বেব সৎ, তিনি সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অনন্য উচ্চতায় তুলেছেন নিজেকে। আমাদের সমাজে অসৎ মানুষের শাস্তি দেয়ার জন্য অনেক ব্যবস্থা আছে। যদিও অসৎ ব্যক্তিরা সকল ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সৎ ব্যক্তির মূল্যায়নের তেমন ব্যবস্থা আছে বলে মনে হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, সৎ ব্যক্তির মূল্যায়ন করা বা যথাযথ পদায়ন করার জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে সৎ মানুষদেরকে এমন দৃষ্টান্তমূলক পুরস্কৃত করা প্রয়োজন যা দেখে অনুজরা উৎসাহিত হয় সততার চর্চা করতে। তাদের মনে এ প্রতীতী গ্রথিত হোক “সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা” —ইহকাল পরকাল সর্বাবস্থায় আত্মবিশ্বাসে অবিচল, অটল ও অনড় থাকুক নিরন্তর।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সন্দ্বীপে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা

বাংলাদেশ ইসকন নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, বিতর্কিত মৎস্য কর্মকর্তাকে বদলি