শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি নথিতে বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দানের প্রথম প্রস্তাবকারী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ছিলেন ১৯৪৭ সালের গণপরিষদ সদস্য। অসাম্প্রদায়িক এই নেতা ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে অধিবেশনের সব কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপন করেন। তদানীন্তন লিয়াকত আলী সরকার সে দাবি নাকচ করে দিলে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাতও সেখানেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বর্ষীয়ান নেতাকে সপরিবারে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। তবে ভাষা আন্দোলনের এত বছর পরেও কোথাও নেই তার স্মৃতি সংরক্ষণের চেষ্টা। এতে হতাশ হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী এই বিশিষ্ট নেতার নামে জেলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘ভাষা আন্দোলন ও ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। অনুশীলন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্থানীয় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগারে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অনুশীলনের আহ্বায়ক সাংবাদিক আবদুন নূর। সভায় আলোচনায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা জাসদ সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিলাল বণিক, বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন আহমেদ তফছির, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদ, জেলা ছাত্রমৈত্রীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রদ্যোত নাগ, জেলা উদীচীর সভাপতি জহিরুল ইসলাম স্বপন, জেলা তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. নাসির, জেলা কৃষক-খেতমজুর সমিতির আহ্বায়ক আবদুস সোবহান মাখন, অনুশীলনের সদস্য সচিব ওয়াহিদ শামীম, জেলা ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক সানিউর রহমান, গণসাংস্কৃতিক মৈত্রীর আহ্বায়ক ঈসা ইসলাম প্রমুখ। আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, তৎকালীন পাকিস্তান গণপরিষদে উর্দু এবং ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের কার্যবিবরণীর ভাষার মর্যাদা দানের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যাই বেশি এবং তারা বাঙালি। সেহেতু অবশ্যই বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সকল কার‌্যাবলীর জন্য ব্যবহার করা উচিত এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। কিন্তু লিয়াকত আলী খান সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের ভিত্তিতে এই দাবি নাকচ করে দেন। তারা বলেন, ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ নামক জাঁতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। সেজন্যই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই পাক হানাদার বাহিনীর হাতে তাকে পরিবার সদস্যদেরসহ নৃশংসভাবে শহীদ হতে হয়েছিল। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে তার স্মৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য জাতীয়ভাবে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তেমন কিছুই করা হয়নি। বক্তারা জাতীয়ভাবে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাকে উচ্চশিক্ষার মাধ্যম করাসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে বাংলার প্রচলন, বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধ, দেশের বিভিন্ন আদিবাসীর মাতৃভাষা সংরক্ষণ এবং অন্তত প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদান নিশ্চিত করারও দাবি জানান।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন