নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোটগ্রহণ চলাকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত, ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিএনপি, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের চতুর্থ ধাপের ৫৫ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে কেন্দ্রেই প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ফলাফল দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সেই ফলাফল চলে যাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সব কেন্দ্রের ফলাফল মিলিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন। এ ধাপে ২৬ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ও ২৯ পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় আবদুল মাবুদ নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মান্নানের ছোট ভাই বলে জানা গেছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরো চারজন। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে জালভোট ও বিভিন্ন সহিংসতায় পাঁচজন আহত হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে ব?রিশা?লের বানারীপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প?দে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএন?পি প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহ?ম্মেদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মিন্টু ভোট বর্জন ক?রে?ছেন। ভোটকে?ন্দ্রে অনিয়ম ও কারচু?পির অভিযোগ এনে? গতকাল রোববার দুপু?রে তাঁরা সাংবা?দিক?দের কা?ছে পৃথকভা?বে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অনিয়মের অভিযোগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ইমাম হোসেন পাটওয়ারী নির্বাচন বর্জন করেছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভায় উন্মুক্তভাবে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করা, এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ এনে ধানের শীষের প্রার্থী সাহেদ আলী পটু ও লাঙলের প্রার্থী আলমগীর হোসেন ভোট বর্জন করেছেন। গতকাল বেলা ১১টার দিকে তাঁরা সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া নরসিংদী পৌর নির্বাচনে একটি কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার ইউএমসি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গতকাল ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর এ ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এক কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আহত হয়েছেন। গত ৩ জানুয়ারি চতুর্থ ধাপের ৫৬টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হচ্ছে না। আবার মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সব মিলিয়ে গতকাল ৫৫টিতে ভোট হয়।
যে ৫৫ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ
ঠাকুরগাঁও জেলার ঠাকুরগাঁও (ইভিএম) ও রাণীশংকৈল, রাজশাহীর নওহাটা, গোদাগাড়ী (ইভিএম), তানোর ও তাহেরপুর, লালমনিরহাটের লালমনিরহাট (ইভিএম) ও পাটগ্রাম, নরসিংদীর নরসিংদী, মাধবদী (ইভিএম), রাজবাড়ীর রাজবাড়ী (ইভিএম) ও গোয়ালন্দ, বরিশালের মুলাদী (ইভিএম), বানারীপাড়া, শেরপুরের শেরপুর (ইভিএম), শ্রীবরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ (ইভিএম), নাটোরের বড়াইগ্রাম, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, বান্দরবানের বান্দরবান (ইভিএম), বাগেরহাটের বাগেরহাট (ইভিএম), সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা (ইভিএম), হবিগঞ্জের চুনারুঘাট (ইভিএম), কুমিল্লার হোমনা (ইভিএম), দাউদকান্দি (ইভিএম), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, পটিয়া (ইভিএম), চন্দনাইশ, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর (ইভিএম), হোসেনপুর, করিমগঞ্জ, টাঙ্গাইলের গোপালপুর (ইভিএম) ও কালিহাতী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া (ইভিএম), চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, আলমডাঙ্গা (ইভিএম), চাঁদপুরের কচুয়া (ইভিএম), ফরিদগঞ্জ, নেত্রকোনার সদর (ইভিএম), যশোরের চৌগাছা (ইভিএম), বাঘারপাড়া, রাঙামাটির সদর (ইভিএম), মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম (ইভিএম), শরীয়তপুরের ডামুড্যা, জামালপুরের মেলান্দহ, ময়মনসিংহের ফুলপুর (ইভিএম), ত্রিশাল, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর (ইভিএম), কালাই, নোয়াখালীর চাটখিল (ইভিএম), সোনাইমুড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া (ইভিএম), লক্ষ্মীপুরের রামগতি (ইভিএম), ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সিলেটের কানাইঘাট পৌরসভা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করছে কমিশন। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর, ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের এবং তৃতীয় ধাপে ভোট হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে গতকাল ভোট শেষ হলে পঞ্চম ধাপের ভোট হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ৭ এপ্রিলও শেষ ধাপে বেশ কিছু পৌরসভায় ভোট হতে পারে।