নিজস্ব প্রতিবেদক; রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশের শেষের দিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে দাবি করে শনিবার রাতে বিএনপির ৩০১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ ও রমনা মডেল থানার পুলিশ সূত্রে গতকাল রোববার এ তথ্য জানা গেছে। দুটি মামলাই পুলিশ বাদি হয়ে করেছে। শাহবাগ থানার মামলায় ২৯ জনকে এজহারনামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ। এসআই মো. গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘এ ঘটনায় মো. শরীফ হোসেন নামের এক বিএনপির নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা হচ্ছে। আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ এদিকে, রমনা মডেল থানায় একই ঘটনায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় ৩২ জনকে এজহারনামীয় আসামি করে ১০০ থেকে ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার বাদি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল উসমান মাসুম। দুই থানায় ৩৪, ১০৯, ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৫৩, ৪২৭ ধারার দ্রুত বিচার আইনে মামলা দুটি করা হয়েছে। এসআই শহিদুল উসমান মাসুম বলেন, ‘শনিবার রাতে হওয়া এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করা আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেছিলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল। এ সময় তারা দায়িত্বরত পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিপেটা করে।’ গতকাল বিকেলে রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেছিলেন, ‘পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় আটজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন নিজেদের মতো করে।’ শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেছিলেন, ‘রমনা ও শাহবাগ থানা মিলে প্রায় ৪০ জনকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ প্রমাণিত না হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। আর যাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’ জানা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফের বক্তব্য চলাকালে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেন, ‘পুলিশ অতর্কিতভাবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’ তবে তাৎক্ষণিক আহতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে দুপুরের দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের শেষদিকে হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। ছত্রভঙ্গ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। পরে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। অন্তত ১৫/২০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চলার পর সেখান থেকে সরে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।