মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল ; একেবারে তীরে এসে তরী ডুবল বাংলাদেশের। ২৩১ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ২১৩ রানে থামতে হলো। এতে করে ১৭ রানে জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল। বলা যায় ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইওয়াশ হওয়ার প্রতিশোধ দারুণভাবে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাওয়াশের বিপরিতে হতে হলো ক্যারিবীয়ওয়াশ! টেষ্টে এত কম রানে পরাজয় নেই বাংলাদেশের। সবচেয়ে বড় কথা নিজেদের মাটিতে অনেকটা খর্বশক্তির ওয়েষ্ট ইন্ডিজের কাছেই হারতে হলো। পাচঁদিনের ম্যাচটি শেষ হয়ে গেল চারদিনে। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রথম টেষ্টটিও ৩ উইকেটে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ। মূলত প্রথম ইনিংসে সফরকারীদের করা ৪০৯ রানই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ যখন ২৬৯ রানে শেষ হয় প্রথম ইনিংস তখনই ম্যাচটা হেলে পড়েছিল কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের দলের দিকে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে মত্র ১১৭ রানে অলআউট করে দিয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
২৩১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জয় পেতে হলে বাংলাদেশকে ইসিতহাস রচনা করতে হতো। কিন্তু তার কিছুই করা সম্ভব হয়নি মোমিনুল হক সৌরভের দলের। পরাজিত হয়ে মাথা নিচুঁ করে ঘরের মাঠে ফিরে আসে। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৫৩ রান ৭ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। টেস্টে সবচেয়ে অধারাবাহিক বাংলাদেশ দল এখন। সেটি বিগতদিনের মতো সাম্প্রতিক সময়েও প্রমাণিত হচ্ছে। এই ফর্মেটে কতটা অধারাবাহিক সেটা আরও একবার প্রমাণ করেছে দলটি। উইকেটে শান্ত হয়ে পড়ে থাকলেই ম্যাচটা জেতা সম্ভব ছিল। কিন্তু সেটাও করতে পারেনি তারা। চট্টগ্রাম টেস্টে ৪ দিন এগিয়ে থেকেও শেষদিনে ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর ঢাকা টেস্টেও ২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পরাজিত হতে হয়েছে। সে হিসেবে বলতেই হচ্ছে এখনো অনেককিছুই শেখার আছে।
অভিষেক ম্যাচে কাইল মায়ার্স যেখানে ডাবল সেঞ্চুরি করেন সেখানে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক টেষ্ট খেলেও হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া যায়না। বলা যায়, ক্রিকেটারদের কাছে বিরক্তির নাম টেষ্ট ক্রিকেট। নয়তো মেজাজ দেখাতেই পারছেনা লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিমের ব্যাটেই ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ দল। এক পাশে সৌম্য সরকার ধীরস্থির ভাবে ব্যাট চালালেও টেস্ট ক্রিকেটের বিবেচনায় বিধ্বংসীই ছিলেন তামিম। দুজনের ওপেনিং জুটিতে ৫৯ রান আসে, যা বাংলাদেশের জন্য আশার বাণী হয়ে ফোটে। কিন্তু অপয়া ১৩ রান করে ফিরে যান সৌম্য। এরপর দ্রুতই টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮ তম হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে যান তামিম। যদিও ফিফটিকে আর টেনে নিতে পারেননি দেশসেরা এই ওপেনার। দলীয় ৭০ রানে ৪৬ বলে ৯ চারে ৫০ রান করে আউট হয়ে দলকে চরম বিপদে পেলে যান। অপর প্রান্তে ব্যাট হাতে আরও একবার ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১১ রান করেই যেন নিজের দায়িত্বটা সেরেছেন এই বাহাতি। অনেকে তাই তার টেষ্ট খেলার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
৭৮ রান করতে ৩ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল। বিরতি থেকে ফিরে আর কোন উইকেট না হারিয়েই ১০০ রান পূর্ণ করে টাইগাররা। শেষ ৭ উইকেট হাতে রেখে ১৩১ রানের লক্ষ্যটা তখন সহজই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে ১৪ রান করা মুশফিকুর রহিমের আউটে বদলে যায় দৃশ্যপট। ১০১ রানে মুশফিকের বিদায়ের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই ফিরে যান মোহাম্মদ মিথুনও। ১০ রানের বেশি করতে পারেনি প্রথম ইনিংসে কিছুটা দৃঢ়তার পরিচয় দেয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক মোমিনুল হক ও লিটন দাসের গড়ে ওঠা জুটিতে যখন আবারও জয়ের সম্ভাবনা জেগে উঠছিল। ঠিক এই সময়ই ভাল খেলতে থাকা অধিনায় ২৬ রান করে চরম অধৈর্য্যরে পরিচয় দেন। ২২ রান করে লিটন ফিরে গেলে শঙ্কা নয়, বাস্তবতাতেই হার অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য। যদিও ১২০ টেস্ট খেলা ৯০ বার এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়া দলটির জন্য এটা তেমন কিছু হওয়ার কথা নয়।
কুড়ি বছর পার করে এখনো শেখার পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই শেখাটা যে কবে শেষ হবে সেটা বলতে পারছেনা কেউ। বাংলাদেশের জন্য যেন টেষ্ট খেলাটা অনেকটা টোয়েন্টি-২০’র মতো। তিন নাম্বারে ব্যাট করতে নামা নাজমূল শান্ত যেন ব্যর্থতার এক মুর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। চতুর্থ দিনে দারুণ বোলিং করা তাইজুল-নাঈমের স্পিন ঘূর্ণিতে ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সমতা নিয়েই চতুর্থ দিনের মধ্যাহ্ন বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর সেখান থেকে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে হলে মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে দ্রুত উইকেট তুলে নিতে হতো টাইগারদের। সেই কাজটা দুর্দান্ত ভাবেই করছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৬ উইকেটে ৯৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতির পর ব্যাট শুরু করেন প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ভোগানো ক্রুমাহ বোনার ও জশোয়া ডি সিলভা। দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের জুটিকে হুমকি হতে দেননি বাহাতি তাইজুল ইসলাম। ২০ রান করা ডি সিলভাকে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ বানিয়ে ফেরানোর পর ভয়ংকর আলজারি জোসেফকেও ফিরিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৮ রান করা ক্রুমাহ বোনার নাঈম হাসানের বলে বোল্ড হয়ে গেলে অল আউট হওয়া সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, রাকিম কর্নওয়েলকে ১ রানে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১৭ রানেই গুটিয়ে দেন নাঈম হাসান। প্রথম ইনিংসে ১১৩ রানে এগিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিড দাঁড়ায় ২৩০ রান। এর আগে ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে দিন শুরু করেন আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান ক্রুমাহ বোনার ও জোমেল ওয়ারিকান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪০৯ এবং ১১৭ (জন ক্যাম্পবেল ১৮, শেন মোসলে ৭, এনক্রুমাহ বোনার ৩৮, জশোয়া ডি সিলভা ২০, তাইজুল ইসলাম ৪/৩৬, নাঈম হাসান ৩/৩৪, আবু জায়েদ রাহি ২/৩২, মেহেদি হাসান মিরাজ ১/১৫)।
বাংলাদেশ ২৯৬ ও ২১৩ (তামিম ইকবাল ৫০, মেহেদি হাসান মিরাজ ৩১, মোমিনুল হক ২৬, লিটন দাস ২২ রাকিম কর্নওয়েল ৪/১০৫, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৩/২৫, জোমেল ওয়ারিকান ৩/৪৭)
ফলাফল ঃ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী।
সিরিজ ঃ ওয়েষ্ট ইন্ডিজের ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
ম্যাচ সেরা ঃ রাকিন কর্নওয়েল (ওয়েষ্ট ইন্ডিজ)
সিরিজ সেরা ঃ এনক্রমাহ বোনার (ওয়েষ্ট ইন্ডিজ)।