লালমনিরহাট: পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি (আরইআরএমপি)-৩ এর সরকারি শ্রমিক দিয়ে ঠিকাদারের কাজ ও প্রকৌশলীর রান্নার কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার বিরুদ্ধে।এছাড়াও গ্রামীণ সড়ক সংস্কার করতে মেইনটেন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় উপজেলার ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৪২৪ টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে দায়সারাভাবে করানোর অভিযোগও উঠেছে।জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের (এলজিইডি) অধিনে আদিতমারীর গ্রামীণ সড়ক সংস্কার করতে ম্যান্টেনেন্স প্রজেক্টের আওতায় ৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার ৪২৪ টাকার ১৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে উপজেলা পরিষদ থেকে হ্যালিপ্যাড হয়ে মহিষখোচা সড়কের (সড়ক নম্বর- ১৫২০২৩৩০১০) সংস্কারের বিপরীতে সরকারি বরাদ্দ ধরা হয় ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৯৩২ টাকা। কিন্তু সড়কটির কাজ সম্পন্ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রেহেদুজ্জামানের সঙ্গে বরাদ্দের চেয়ে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬২৯ টাকা অতিরিক্ত অর্থে চুক্তি করে এলজিইডি।অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও উপজেলা পরিষদ থেকে হ্যালিপ্যাড হয়ে মহিষখোচা সড়কের (সড়ক নম্বর ১৫২০২৩৩০১০) সংস্কার কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের বিস্তার অভিযোগ। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও অতিরিক্ত তাপে গলানো নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হতেই উঠে যাচ্ছে পাথর। ভালোভাবে রোলার না করায় সড়কটি উঁচু-নিচুই রয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।ওই প্রকল্পে সড়কটির দুই ধারে ৩ ফিট করে ৬ ফিট মাটি ভরাটে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা না করেই গত সপ্তাহে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে চূড়ান্ত বিলের আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সেই মাটি ভরাটের কাজটি সম্পন্ন করতে আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানার নির্দেশে কাজ করছেন আরইআরএমপি-৩ এর নারী শ্রমিকরা। গত ১৫ দিন ধরে এসব শ্রমিক দিয়ে সড়কটিতে মাটি ভরাটের কাজ করানো হচ্ছে। এতেই শেষ নয় আরইআরএমপি’র শ্রমিক পারুল বেগমকে সড়কের মাটির কাজের পরিবর্তে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রান্নার কাজ করানো হচ্ছে বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ। একই অভিযোগ মেনটেন্যান্স প্রজেক্টের ভাদাই ইউনিয়নের মান্নানের মিল থেকে বুড়িরদিঘী সড়ক (রোড নম্বর- ১৫২০২৩৩০১০) সংস্কার প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ ৫৩ লাখ ৫৮ হাজার ২২ টাকা ধরা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসএস ব্রাদার্সের সঙ্গে কাজটির চুক্তি করা হয় ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ২৪ টাকা। অতিরিক্ত বরাদ্দের সেই সড়কেও প্যালাসাইডিং ঢালাই শুরু হলে নিম্নমানের কাজের কারণে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করতে প্রকৌশলীর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। নামে মাত্র রড দিয়ে প্যালাসাইডিংয়ের পিলার লাগানো হয়েছে। নিম্নমানের খোয়া ও ঢালাইয়ে ভাইবেটর ব্যবহার না করায় ঢালাইয়ের ভেতরে ফাঁকা রয়েছে। যাতে সামান্যতেই ভেঙে যাওয়ার শঙ্কায় স্থানীয়দের চাপে গত ০২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর।আরইআরএমপি-৩ এর ভাদাই ইউনিয়নের শ্রমিক সর্দার লাভলী বেগম বলেন, আমার দলে ১০ জন শ্রমিকের একজন প্রকৌশলীর কার্যালয়ে রান্নার কাজ করেন। অন্য নয়জন অন্য সড়কে কাজ করলেও গত ১৫ দিন ধরে উপজেলা প্রকৌশলীর নির্দেশে নতুন এ সড়কে কাজ করছি। নিয়ম-অনিয়ম আমরা জানি না।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালমনিরহাটের সিনিয়র একজন ঠিকাদার বলেন, টাকা ছাড়া এ উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের কেউ প্রকল্পে যান না। টাকা ছাড়া স্বাক্ষর হয় না কোনো ফাইল। অনেক সময় মাটির কাজের বরাদ্দের অর্থ ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়ে আরইআরএমপি’র নারী শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করে নেন এই উপজেলা প্রকৌশলী। কাজ করলে ঠিকাদারের লাভ হবে, কিন্তু অনেক সময় মাটির অংশ প্রকৌশলীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ঠিকাদাররা। আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, প্রকল্পটির কাজ সদ্য সম্পন্ন করে ঠিকাদার মাটি ফেলে চলে গেছেন। সেটা সমান করে দিতে আরইআরএমপি’র শ্রমিকদের লাগানো হয়েছে। আর কার্যালয়ে রান্নার কাজে যে শ্রমিক রয়েছেন, তা দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ধরে চলছে। আগের প্রকৌশলীদের করা নিয়মে চলছে। তবে মাটির টাকা বা ফাইল প্রতি অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্যালাসাইডিং কাজে নিম্নমানের অভিযোগে ওই কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এলজিইডি লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান বলেন, আরইআরএমপি-৩ এর শ্রমিক দিয়ে চলমান ঠিকাদারি কাজে নিয়োগ করা ঠিক নয়। এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীকের শোকজসহ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।