ঢাকা: তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) এখন অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। বিশ্ববাজারে টানা আট মাস ধরে এলপিজির দাম বেড়েই চলছে।গত জুন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এলপিজির দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছরের জুনে প্রতি টন এলপিজির মূল্য ছিল ৩৩৬ ডলার, সেটি এই ফেব্রুয়ারিতে হয়েছে প্রায় ৬০০ ডলার। সে হিসাবে বিশ্ববাজারে প্রতি টনে প্রায় ২৬৪ ডলার দাম বেড়েছে এলপিজির। গত সাত বছরের মধ্যে এটা এলপিজির সর্বোচ্চ দাম। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন বছরের শুরুতেই দাম বাড়িয়েছে এলপিজি আমদানিকারক সব প্রতিষ্ঠান।খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম প্রতি টনে প্রায় ২৬৪ ডলার বাড়ায় গ্রাহকপর্যায়ে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
আমদানিকারক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববাজারে এলপিজির যে দাম, সেটি গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম বেড়ে হয়েছিল প্রতি টন ৬২০ ডলার। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেটি হয়েছে প্রায় ৬০০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের জুনে প্রতি টন এলপিজির মূল্য ছিল ৩৩৬ ডলার, জুলাইয়ে ৩৪৬ ডলার, আগস্টে ৩৫১ ডলার, সেপ্টেম্বরে ৩৫৮ ডলার, অক্টোবরে ৩৭৮.৫ ডলার, নভেম্বরে ৪৩৭ ডলার, ডিসেম্বরে ৪৫৭ ডলার, এ বছর জানুয়ারিতে ৫৩৬ ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে সেটি বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০০ ডলার।করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরুর দিকে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। গত বছরের এপ্রিলে পণ্যটির দাম টনপ্রতি ২৫০ ডলারে নেমে গিয়েছিল। দামের এই নিম্নমুখিতার প্রভাব পরবর্তী সময়ে দেশের বাজারেও পড়ে। ওই সময় দেশেও গ্রাহকপর্যায়ে পণ্যটির দাম কমিয়েছিলেন আমদানিকারকরা। তবে বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আবারও গ্রাহকপর্যায়ে পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন তাঁরা।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে এই গ্যাসের ৯৮ শতাংশই আমদানি করতে হয়, যার পুরোটা আসে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। যেহেতু এটি আমদানিনির্ভর পণ্য, তাই বিশ্ববাজারের সঙ্গেতাল মিলিয়ে প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করতে হয়।চাহিদা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশের এই গ্যাসের বাজারেও দাম বাড়ছে। গত বছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ভোক্তাপর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজির দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এ বছরের জানুয়ারিতে ১২ কেজির এলপিজির দাম ছিল ১০০০-১১০০ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম আরো ৫০ টাকা করে বাড়িয়েছে। দেশে ২৮টি এলপিজি গ্যাস কম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বসুন্ধরা এলপিজি। কম্পানির মার্কেট শেয়ার ২৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস কম্পানির হেড অব ডিভিশন (সেলস) প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দামে এখন ঊর্ধ্বগতি। এই ঊর্ধ্বগতির কারণ, বিশ্বে শীতকালে এলপিজির দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক গুণ। গত ৯ মাসে প্রতি টনে ২৬৪ ডলার এলপিজির দাম বেড়ে গেছে, যা প্রায় দ্বিগুণ। ২০২০ সালের জুনে ছিল ৩৩৬ ডলার, সেটা এখন হয়েছে প্রায় ৬০০ ডলার। বিশ্ববাজারে যদি এমন চড়া মূল্য থাকে, এর একটি প্রভাব ভোক্তাপর্যায়ে পড়বেই। তবে আমরা আশা করছি, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তখন আবার আমরাও ভোক্তাদের কাছে সহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারব। ’তিনি বলেন, দাম বাড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ বিশ্ববাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের এলপিজির ৯৮ শতাংশই আমদানিনির্ভর। সেটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করে থাকে। যেহেতু এটি আমদানিনির্ভর, তাই এটির দাম নির্ধারণ করা।জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির দাম বাড়লে আমদানিকারক বা সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু করার নেই। কারণ এটি আমদানিনির্ভর। এলপিজির দাম বাড়ার ফলে মানুষের মধ্যে কিছু প্রভাব অবশ্যই পড়বে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে আনুপাতিক হারে যেন দাম বাড়ানো হয়, সেটাই আমরা চাই। ’