রাজশাহী: অবশেষে স্থায়ী ঠিকানা পাচ্ছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের খোর্দ্দবাউসা গ্রামের সেই শামুকখোল পাখিরা। স্থানীয় এক আমবাগানে পাখিদের বাসা ভাড়া বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।আমবাগানের পাখি সুরক্ষায় বাগানের ৫ জন মালিক-ইজারাদারকে বার্ষিক ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তবে চিঠি না আসায় এখনও ভাড়ার টাকা মেলেনি।পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-২ শাখার উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত পত্রে ক্ষতিপূরণের ওই টাকা দেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও সেই চিঠি রাজশাহীতে পৌঁছেনি।এদিকে, যে পাঁচজন আমবাগান মালিক এ বরাদ্দ পাচ্ছেন- তারা হলেন বাঘার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের মঞ্জুর রহমান, সানার উদ্দিন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও ফারুক আনোয়ার।এর আগে বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষার শেষে শামুকখোল পাখিরা বাচ্চা ফোটানোর জন্য খোর্দ্দবাউসা গ্রামের আমবাগানে বাসা বাঁধে। ২০১৯ সালে অক্টোবরের শেষে পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়েছিল, কিন্তু বাচ্চা উড়তে শেখেনি। এ অবস্থায় আমবাগানের ইজারাদার বাগানের পরিচর্যা করতে চান। তিনি বাসা ভেঙে আমগাছ খালি করতে চান। একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন।স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা তাকে বাসা না ভাঙার জন্য অনুরোধ করেন। অন্তত যতদিন বাচ্চারা উড়তে না শেখে। তাদের অনুরোধে তিনি পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন।১৫ দিনের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। ওই দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়।উচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশে কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না মর্মে জানতে চান। পরে উচ্চাদালতের ঘোষিত আদেশে এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
এজন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানকে আহ্বায়ক করে ও বনবিভাগ সহকারী বন সংরক্ষক মেহেদী হাসানকে আহ্বায়ক করে অপর একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা পাখির বাসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮টি আমগাছ চিহ্নিত করে। তারা ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। তাদের প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল পাখি থাকা সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, পাখিরা সব সময় একই জায়গায় বাসা বাঁধে না। কয়েক বছর পর তারা নতুন জায়গায় চলে যায়। তাই যে বছর পাখিরা আম বাগানে বাসা বাঁধবে না, সে বছর কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।প্রস্তাবনায় বলা হয়, পাখির বিষ্ঠায় স্থানীয় মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়ে এ ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। পাখির অসুস্থতার ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে হবে, সর্বোপরি পাখি সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। তাদের উৎসাহিত করতে সেমিনার করতে হবে ও উপহার সামগ্রী দিতে হবে।এদিকে, সরেজমিনে দেখা গেছে- পাখিদের বাসা বেঁধে আশ্রয় নেওয়া ৩৮টি গাছের মধ্যে বড় একটি আমগাছ মরে যাচ্ছে। বাগানে কোনো পাখি দেখা যায়নি। স্থানীয়রা জানান, বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়। গত কয়েক বছর ধরে শামুকখোল পাখিরা এ বাগানে বাসা বেঁধে আছে। এ বাগানে বাচ্চা ফোটায়।জানতে চাইলে বাগান মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাখি সুরক্ষায় এটি সরকারের মহৎ উদ্যোগ। বাগান মালিকদের জন্য সরকারি এমন একটি প্রকল্প আশা করেছিলাম। প্রক্রিয়াধীন সেই টাকা বিতরণ কবে হবে সেই অপেক্ষায় আছি।রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ৩৮টি আম গাছে পাখির বাসা ছিলো। সেই গাছগুলোর আমের সম্ভাব্য দাম ও পরিচর্যার ব্যয় নিরূপণ করা হয়েছে। গাছগুলোর মধ্যে একটি মরে যাচ্ছে। গাছটি বাঁচাতে পরিচর্যার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আহম্মেদ নিয়ামুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বন সংরক্ষণ (সিসিএফ) কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নির্দেশনা আসবে। সেই নির্দেশক্রমে অনুমতির চিঠি পেলে টাকার চেক হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এখনও সেই চিঠি তারা পাননি বলেও জানান এ কমকর্তা।