নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সংক্রান্ত বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সায় দিয়েছে বলে জানা যায়। আর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) ও কুইক রেন্টাল (দ্রুত ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়ানো হবে না। অর্থাৎ ইতিমধ্যে যে পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, ওই পর্যন্ত ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু থাকবে। চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া তেলভিত্তিক পুরনো কেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার চলমান প্রক্রিয়াও চালু রাখা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি। সর্বোচ্চ ১৩ হাজার মেগাওয়াটেরও কম চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। ফলে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন ক্ষমতা অলস বা অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। তার মধ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কেন্দ্রগুলোর জন্য বড় অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। আর সরকারিগুলোর জন্যও ওভারহেড কস্ট এবং আরো কিছু ব্যয় বহন করে যেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাত মহাপরিকল্পনা ২০১৬-তে প্রাথমিকভাবে ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৪০ হাজার মেগাওয়াট হওয়ার যে ধারণা করা হয়েছিল, সেখানেও পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৩০ হাজার মেগাওয়াটেরও কিছু কম। বর্তমানে যেসব নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলছে, তাতেই ২০৩০ সালের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। সেজন্য বিপুল পরিমাণ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আর্থিক দায় বহন করার কোন প্রয়োজন নেই।
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে ছোট-বড়, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সর্বমোট ৭৬টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর সর্বমোট উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার ৭৫ মেগাওয়াট, যা দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। অথচ বাণিজ্যিক ও আর্থিকভাবে গ্রহণযোগ্য জ্বালানি মিশ্রণ অনুযায়ী উন্নয়নশীল কোন দেশে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। তাতে বিপুল আর্থিক দায় সৃষ্টি হয় বলে অর্থনীতিবিদ এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের গবেষকদের অভিমত। বর্তমানে দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৯টি, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৭১ মেগাওয়াট। কুইক রেন্টাল ১২টি, যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৯৮৩ মেগাওয়াট। তার বাইরে বেসরকারি খাতে রয়েছে ৩৬টি তেলভিত্তিক কেন্দ্র, যেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৪ হাজার ২৮৯ মেগাওয়াট। আর সরকারি খাতে রয়েছে ১৯টি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪৩২ মেগাওয়াট।
সূত্র আরো জানায়, রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৫টি তিন বছর মেয়াদী রয়েছে। অর্থাৎ সেগুলো তিন বছরের জন্য চালু করা হয়েছিল। এর মধ্যে চালু থাকা সবগুলো কেন্দ্রই এক বছর করে বাড়তি মেয়াদ (এক্সটেশন) পেয়ে আসছে। সেগুলো এখনো এক্সটেনশনে আছে। তবে সেগুলো সবই চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে (মেয়াদ শেষ হওয়া সাপেক্ষে) বন্ধ করে দেয়া যাবে। তাছাড়া অন্য ৪টি কেন্দ্র ১৫ বছর মেয়াদি। সেগুলোও এক্সটেনশনে আছে। তার মধ্যে একটির চলমান মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৬ জুন। বাকি ৩টির মেয়াদ শেষ হবে যথাক্রমে ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ এবং ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর। কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩টি রয়েছে ৩ বছর মেয়াদি আর ৯টি ১৫ বছর মেয়াদি। সবগুলোই এক্সটেনশনে আছে। ২০২২ সালের মার্চে এর মধ্যে সর্বশেষটির মেয়াদ শেষ হবে। তবে তেলভিত্তিক অন্যান্য কেন্দ্রগুলোর আয়ুষ্কাল, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজনীয়তা প্রভৃতি বিবেচনা করে বন্ধ করার বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, পিক আওয়ারের (দৈনন্দিন সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) চাহিদা পূরণ ও কোন জরুরি প্রয়োজন মোকাবেলার জন্য তেলভিত্তিক পিকিং কেন্দ্রগুলো রাখা হবে। তাছাড়া সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখার জন্য যদি কোন রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বা অন্য কোন তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালু রাখতে হয় তাও রাখা হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের জন্য কোন ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়া হবে না। চুক্তি হবে ‘নো পাওয়ার নো পে’ নীতিভিত্তিক।