ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যাট্রিক সিরিজ জয়

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হ্যাট্রিক সিরিজ জয়

স্পোর্টস ডেস্ক : একই উইকেটে খেলা হলেও কন্ডিশনের কারণে বোলারদের জন্য ছিল না খুব একটা সহায়তা। বল ভালোভাবেই এলো ব্যাটে। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজ, মুস্তাফিজুর রহমানদের দারুণ লাইন-লেংথের সামনে খুব একটা লড়াই করতে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডজের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করে সিরিজ জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তারা গুটিয়ে গেল দেড়শর নিচে। অধিনায়ক তামিম ইকবালের ফিফটিতে সহজেই সেই রান পেরিয়ে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টানা তিন সিরিজ জিতল তারা। ৪৩ ওভার ৪ বলে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০০ বল বাকি থাকতে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এটি তাদের টানা সপ্তম জয়। আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে টানা দ্বিতীয় জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট হলো ২০। নিজের প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আবার উজ্জ্বল মিরাজ। তরুণ এই অফ স্পিনার ২৫ রানে নেন ৪ উইকেট, ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা। আগের সেরাও ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, সেবার ২৯ রানে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা মুস্তাফিজ ২ উইকেট নেন ১৫ রানে। আগের ম্যাচের নায়ক সাকিবেরও শিকার দুটি, ৩০ রানে। পরে ব্যাট হাতেও ভালো করেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম সিরিজ জিতলেন তামিম। আগের ম্যাচে ৪৪ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার এবার করেন ৫০। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ফিফটি করার পথে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ওয়ানডেতে এর চেয়ে বেশি রান আছে তার কেবল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা ছিল আত্মবিশ্বাসী। তবে ভালো শুরুটা বড় করতে পারেননি লিটন দাস। আকিল হোসেনের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন এই ওপেনার। ষষ্ঠ ওভারে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন আকিল। তবে আগের ম্যাচের মতো ভীতি ছড়াতে পারেননি তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে সাবলীল ছিলেন তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত। স্পিনের বিপক্ষে স্বাগতিকদের পায়ের ব্যবহার ছিল কার্যকর। জেসন মোহাম্মেদের সাদামাটা অফ স্পিনে যদিও ভুগছিলেন শান্ত। তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে প্রায় ক্যাচ উঠে যাচ্ছিল। ভাগ্য ভালো ছিল তার, ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় থার্ড ম্যানে। পরে আবার লং অফে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। পরে সেই মোহাম্মেদের বলেই উইকেট বিলিয়ে আসেন শান্ত। শর্ট বল অন সাইডে যেকোনো জায়গায় খেলতে পারতেন তিনি। কিন্তু ক্যাচ তুলে দেন শর্ট মিডউইকেটে। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭৫ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেই ফিরে যান তামিম। রেমন রিফারের বলে ধরা পড়েন কিপার জশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ফিফটি পাওয়া তামিমের ৭৬ বলের ইনিংসে তিনটি চার ও একটি ছক্কা। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে বাকিটা সহজেই সারেন সাকিব। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরার পর ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ভুগছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচে শেষ করে আসতে পারেননি কাজ। এবার তার ব্যাটে দেখা গেল ছন্দে ফেরার আভাস। চারটি চারে ৫০ বলে ৪৩ রান করেন সাকিব। মুশফিক ২৫ বলে ৯। সকাল থেকে রোদ পায় উইকেট। তাই আগের দিনের মতো অতোটা ধরেনি স্পিন। এরপরও তা যেন দুর্বোধ্যই হয়ে রইলো সুনিল আমব্রিস-কেয়র্ন ওটলিদের কাছে। টস জিতে মোহাম্মেদের ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত ছিল বেশ অবাক করা। তামিম জানান, আগের ম্যাচের মতো এবারও ফিল্ডিংই নিতেন তিনি। যে ভাবনা থেকে আগে বোলিং নিতে চাওয়া, তা পূরণ করেন মুস্তাফিজ-মিরাজ-সাকিবরা। নিখুঁত লাইন-লেংথে বোলিং করে যাওয়া মুস্তাফিজের বলে রান করার পথ পাচ্ছিলেন না ব্যাটসম্যানরা। মাঝে মধ্যে বল ভেতরে ঢোকানোয় বাঁহাতি এই বোলারের বিপক্ষে বাড়তি সাবধানতা ছিল তাদের। আগের ম্যাচের মতো ভেতরে ঢোকা বলেই মুস্তাফিজ নেন প্রথম উইকেট। গালিতে মিরাজের হাতে ধরা পড়েন আমব্রিস। চতুর্থ ওভারে জোড়া আঘাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চেপে ধরেন মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বল জায়গা বানিয়ে কাভারের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে তামিমের হাতে ধরান পড়েন ওটলি। ভুল লাইনে খেলে বোল্ড হয়ে যান জশুয়া। সাকিবকে উইকেট উপহার দেন আন্দ্রে ম্যাককার্থি। অনেকটা যেন প্রথম ম্যাচের পুনরাবৃত্তি। বাঁহাতি স্পিনারের বলে একইভাবে দৃষ্টিকটু স্লগ সুইপ করে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। আগের ম্যাচে প্রতিরোধ গড়া কাইল মেয়ার্স খুলতে পারেননি রানের খাতা। অপ্রয়োজনীয় এক রান আউটে ফিরেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৪১ রানে ৫ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তখন একশ রানই দূরের পথ। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন এনক্রুমা বনার। হাসান মাহমুদের করা শরীরের বেশ কাছের বল কাট করার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে জেসনকে এলডিব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যর্থ রিফার। মিরাজের বলে সফল এলবিডব্লিউর রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় বাংলাদেশ। এরপর শুরু হয় রভম্যান পাওয়েলের লড়াই। শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলকে দেড়শ রানের কাছে নিয়ে যান তিনি। নবম উইকেটে তাকে দারুণ সঙ্গ দেন আলজারি জোসেফ। তিন চারে ১৭ রান করা এই টেল এন্ডার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে সফরকারীদের সর্বোচ্চ ৩২ রানের জুটিটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। এরপর আকিলকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন পাওয়েল। পেসারদের ভালোভাবেই সামলাচ্ছিলেন তারা। নিজের শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসা মিরাজকে বেরিয়ে এসে ওড়াতে গিয়ে বলের নাগাল পাননি পাওয়েল। বেলস ফেলে দেন মুশফিক। এর সঙ্গে ওয়ানডেতে এই প্রথম এক সিরিজে কোনো দলকে টানা দুই ম্যাচে দেড়শ রানের নিচে থামিয়ে দিল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ করেছিল ১২২। ৬৬ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ৪১ রান করে ফিরেন পাওয়েল। টানা দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য রুবেল। তবে আগের ম্যাচের চেয়ে এদিন লাইন-লেংথে অনেক বেশি ধারাবাহিক ছিলেন তিনি। অভিষেকে আলো ছড়ানো হাসান এ দিন ভুগেছেন বেশ। খরুচে বোলিংয়ে ৫৪ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। আগামী সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ক্যারিবিয়ানদের হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্যে মাঠে নামবে তামিমের দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৩.৪ ওভারে ১৪৮ (আমব্রিস ৬, ওটলি ২৪, জশুয়া ৫, ম্যাককার্থি ৩, জেসন ১১, মেয়ার্স ০, বনার ২০, পাওয়েল ৪১, রিফার ২, জোসেফ ১৭, আকিল ১২*; মুস্তাফিজ ৮-৩-১৫-২, রুবেল ৭-০-২৩-০, হাসান ৯-০-৫৪-১, মিরাজ ৯.৪-০-২৫-৪, সাকিব ১০-০-৩০-২)।
বাংলাদেশ: ৩৩.২ ওভারে ১৪৯/৩ (লিটন ২২, তামিম ৫০, শান্ত ১৭, সাকিব ৪৩*, মুশফিক ৯*; জোসেফ ১০-০-৪২-০, মেয়ার্স ২-০-১৫-০, আকিল ৯.২-০-৪৫-১, জেসন ৭-০-২৯-১, রিফার ৫-০-১৮-১)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মেহেদী হাসান মিরাজ
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ২-০তে এগিয়ে

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন