নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে আগামী সপ্তাহে দুই সিটি করপোরেশনকে নিয়ে বৈঠকে বসা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গতকাল শনিবার ঢাকা ওয়াসা আয়োজিত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ‘বিল কালেকশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৯-২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা জানান মন্ত্রী। ওয়াসা ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তাজুল ইসলাম বলেন, নগরীর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঢাকা ওয়াসা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে স্থানান্তরের পর থেকেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় কাজ শুরু করেছে সংস্থা দুটি। আগামী সপ্তাহে এই দুই সিটি করপোরেশনকে নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। দুই মেয়রের পরিকল্পনা জেনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দেয়া হবে। ঢাকা শহরের নাগরিক সমস্যা সমাধান করে একটি আধুনিক বাসযোগ্য দৃষ্টিনন্দন শহর করতে যা যা করার দরকার তা করা হবে। তিনি বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র জনগণের ভোটে নির্বাচিত। জনপ্রতিনিধিরাই পারেন জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করায় মেয়ররা নগরবাসীকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জানান, মন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সে অনুযায়ী বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমিনবাজারে ইন্সিনেরেশন প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই প্ল্যান্টে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য লাগবে তা সরবরাহ করলে যেখানে-সেখানে আর ময়লা আবর্জনা পড়ে থাকবে না। ভবিষ্যতে দেশের সব সিটি করপোরেশন এবং প্রতিটি জেলায় ইন্সিনেরেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে বলেও জানান তাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইবরাহীম। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি ৩৭ টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হাতে ‘বিল কালেকশন অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিষয়ে কথা বলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তাঁদের দুর্নীতির প্রমাণ পেলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তাজুল ইসলাম। সম্প্রতি ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দুজন ভিন্ন মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই দুজনের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকতে পারে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে, তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। আমরা আশা করি একটা সময়ের ব্যবধানে এটা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, সাঈদ খোকন ও শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে। তবে কোথাও যদি দুর্নীতি হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন তারা। গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর কদম ফোয়ারার সামনে এক মানববন্ধনে সাবেক ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন অভিযোগ করেন, বর্তমান মেয়র দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন। এই টাকা বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা তিনি লাভ করেছেন এবং করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, ২য় ভাগের ২য় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাকে বলব, রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দ্নুীতিমূক্ত করুণ। তারপর চুনোপুটির দিকে দৃষ্টি দিন। এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, তিনি (সাঈদ খোকন) ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অনেক কথা বলেছেন। এতে আমার মানহানি হয়েছে। আমি আইনি পদক্ষেপ (মামলা) নেব। ওইদিনই দুই আইনজীবী আদালতে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের আবেদন গ্রহণ করেননি আদালত। এর মধ্যে ওই দুটি মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। এদিকে, সাঈদ খোকনের বক্তব্যের প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগ।