মোঃ বেলাল ভূইঁয়া : সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর এলপিজির কেজিপ্রতি অভিন্ন দাম নির্ধারণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মূল্যায়ন কমিটি। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ৭২ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করে কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার এলপিজির দাম নির্ধারণে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এই সুপারিশ করা হয়। এদিকে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ৭২ টাকা সুপারিশ করা হলেও সরকারি কোম্পানির ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম সুপারিশ করা হয়েছে ৯০২ টাকা, আর বেসরকারি কোম্পানির সাড়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম সুপারিশ করা হয় ৮৬৬ টাকা। প্রসঙ্গত, সারা দেশে সরকারি এলপিজি বিক্রি হয় সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারে, আর বেসরকারি এলপিজি বিক্রি হয় ১২ কোজির সিলিন্ডারে। উল্লেখ্য, সরকারি কোম্পানি তাদের সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু মূল্যায়ন কমিটি তাদের সিলিন্ডারের দাম আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৯০২ টাকা, আর বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডারের বর্তমান দাম ১২৬৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৬৬ টাকা করার সুপারিশ করে। শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল, সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। সরকারি কোম্পানির পক্ষে এলপি গ্যাস লিমিটেডের ফজলুর রহমান এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর পক্ষে ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল দামের প্রস্তাব উপস্থাপন করে। বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্সের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কমিশনের কারিগরি কমিটি সরকারি এলপি গ্যাস লিমিটেডের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাড়ে ১২ কেজির প্রতি বোতল (সিলিন্ডার) এলপিজি বিক্রিতে ৩৩৩ টাকা ২৪ পয়সার ক্রস সাবসিডি ফান্ড তৈরির সুপারিশ করে। অর্থাৎ কারিগরি কমিটির এই প্রস্তাব মেনে নিলে গ্রাহক সরকারি এলপিজি কিনলে প্রতি বোতলে এই টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে, যা সাবসিডি তহবিল নামে একটি সরকারি তহবিলে জমা থাকবে। সেখান থেকে পরে সাবসিডি বা ভর্তুকি দেওয়া হবে। যদিও এর আগে কমিশনের করে দেওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল এবং জ¦ালানি নিরাপত্তা তহবিল নামে দুটি তহবিলে জমা হওয়া টাকা এভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে জ¦ালানি এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। সে সময় কমিশন বলেছিল, এতে সরকারি খাতের আর্থিক অনটন দূর হবে। আর্থিক সংকট না থাকলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এতে দাম কমে আসবে। কিন্তু তহবিল গঠনের এত বছর পরেও সেই আশা বাস্তবায়ন হয়নি। মূল্যায়ন কমিটির পক্ষে কমিশনের উপপরিচালক কামরুজ্জামান সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। গণশুনানিতে ক্যাবের জ¦ালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, এইভাবে সরকারি কোম্পানির দাম বাড়িয়ে ফান্ড করা যায় না। এটি অযৌক্তিক। কোম্পানি বাড়তি এই দামে সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবে কিনা, সেটি আগে বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি কোম্পানিগুলো হাইকোর্টের আদেশের পরও দাম বাড়িয়েছে। সেই দামের টাকা আদায় করতে হবে। পাশাপাশি যেসব লাইসেন্সি কোম্পানি এই দাম বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ভোক্তার অধিকার বিবেচনা করে কমিশন দাম নির্ধারণ করবে বলে আশা করি। রাষ্ট্রীয় খাতের উন্নয়নের বিষয়টি আগে বিবেচনা করতে হবে। সরকারি কোম্পানিরএলপিজির দাম বাড়ানোর সুপারিশ না করে উল্টো কমানো দরকার। গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকি বলেন, সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করবেন বলে আশা করছি। বিভিন্ন ফান্ডের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার পরিষ্কার করা দরকার। টেকনিক্যাল কমিটি কেন আগেই ফান্ড করবে? আবারও একটি ফান্ডের প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। অটোগ্যাস মালিক সমিতির মহাসচিব (প্রস্তাবিত) হাসিন পারভেজ বলেন, ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মিলে এই স্টেশন করছেন। দামের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। মোবাইলফোন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহিউদ্দিন আহমেদ ছাড়াও ভোক্তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এদিকে শুনানি শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে লিখিত মতামত দেওয়া যাবে। এরপর আবারও ছোট পরিসরে বসে দামের বিষয়ে মূল্যায়ন করে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত দামের আদেশ দেবে কমিশন।