রোহিঙ্গা ফেরাতে সরকার এখনও চালকের আসনে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা ফেরাতে সরকার এখনও চালকের আসনে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চট্টগ্রাম: রোহিঙ্গা আসার পর থেকে তাদের ফেরাতে সরকারের যেসব উদ্যোগ তা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা ফেরাতে সেই থেকে এখনও সরকারের পররাষ্ট্রনীতি চালকের আসনে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।আমরা আশাবাদী রোহিঙ্গাদের তারা ফেরত নেবে।রোববার (১০ জানুয়ারি) বেলা ২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলামের দুটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।একে আবদুল মোমেন বলেন, আমরা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, চীন, থাইল্যান্ডসহ সবদেশে গেছি। সবাই স্বীকার করেছে রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার। তাই সমস্যা নির্মূলও করবে তারা। সবাই বলেছে, স্থায়ী সমাধান হলো লোকগুলো ফিরিয়ে নেওয়া। সুতরাং সেইদিন থেকে এখনও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ড্রাইভার সিটে আছে। আমেরিকা বলেন, ইউরোপ বলেন- সবাই একবাক্যে বলছে মিয়ানমারকেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।তিনি বলেন, দুনিয়ার কোথাও দেখেছেন ১১ লাখ মানুষকে জায়গা দেওয়ার? সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাকের ১০ লাখ বাস্তুহারা মানুষ ইউরোপের ২৭টি দেশে জায়গা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। আর এখানে ১১ লাখ মানুষকে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয় দিয়েছেন।‘প্রথমদিকে বিদেশিরা কেউ সাহায্য করেনি। এখনকার লোকজন তাদের ঠাঁই দিয়েছেন, খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন। আমরা এটি নতুন আদর্শ সৃষ্টি করেছি। বাঙালিরা মানুষ, তারা মানুষকে মানবিকতার চোখে দেখে। ’ যোগ করেন মন্ত্রী।রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার প্রতিবেশী রাষ্ট্র। তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তারা বারবার বলছে, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাবে ভেরিফেকশন করার পর। তারা কখনও বলেনি, রোহিঙ্গাদের নেবে না। আমরা বলেছি, তাদের নিয়ে যাও তবে ‘ইউ মাস্ট এনসিউর সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি’। তারা অঙ্গীকার করেছে নিয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও আজ প্রায় সাড়ে ৩ বছরে একটি রোহিঙ্গাও ফেরত যায়নি। কারণ তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব।তিনি বলেন, গত বছরের ২০ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে বড় মিটিং হয়। এরপর কোভিড ও ইলেকশনের বাহানা দিয়ে তারা আর মিটিং করেনি। আমরা আশা করছি, নতুন করে তাদের সঙ্গে বসবো। ইনফেক্ট আজকে মিয়ানমারের সঙ্গে মিটিং চলছে।‘১৯৭৮ ও ১৯৯২ সালে দেখেছি, তখন অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছিল আবার নিয়েও গেছে। ১৯৯২ সালে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা দেশে আসে। পরবর্তীতে আলোচনা মাধ্যমে তারা ২ লাখ ৩০ হাজারকে নিয়ে যায়। ’ বলেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, ইতিহাস আছে তারা নিয়ে গেছে, সেজন্য আমরা আশাবাদী বর্তমানে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকেও নিয়ে যাবে। কিন্তু কখন নিয়ে যাবে, তা বলা মুশকিল। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সব নিয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক আলোচনা চালাচ্ছি।‘তাদের বলেছি, দেখো তোমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। তোমাদের উন্নয়নের যদি প্রত্যাশা থাকে তাহলে এ লোকগুলো নিয়ে যাও। যদি না নিয়ে যাও, তাহলে এই এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি হবে। অশান্তি দেখা দিলে, তোমাদের উন্নয়ন ব্যাহত হবে আমাদেরও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তাদের নিয়ে যাও। কিন্তু তারা নিয়ে যায়নি।মোমেন বলেন, আমরা চীনের সঙ্গে বসেছি, চারটি মিটিং করেছি। শেষ মিটিংটা খুব পজেটিভ ছিল। তখন তারা ওয়াদা করেছিল, রোহিঙ্গাদের তারা বোঝাবে। তাদের দেশের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অন্য সময় কিন্তু বলতো না।রোহিঙ্গা না যাওয়ার কারণ তারা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রোহিঙ্গাগুলো যায় না কেন? দুইবার চেষ্টার পরও যায়নি। একটি বড় কারণ রোহিঙ্গারা তাদের সরকারকে বিশ্বাস করে না। তাদের বলেছি, তোমাদের কাছে বিশ্বাসের অপূর্ণতা রয়েছে। বিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আমরা তিন ধরনের প্রস্তাব দিয়েছি। একটি বলেছি, তোমাদের সরকারের নেতারা এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলুক। তারা একবার এসেছিল, পরে প্রশ্নের মুখে পড়ে আর আসেনি।তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি, রোহিঙ্গা মাঝিদের নিয়ে পরিদর্শন করাও। তারা কিন্তু কোনো উত্তর দেয়নি। তোমাদের সরকারকে যেহেতু বিশ্বাস করে না, তাই তোমরা নন মিলিটারিস সিভিলিয়ানকে রাখাইনে রাখো। তাতে, আমরা বলবো সেখানে তৃতীয় পক্ষ আছে তোমরা যাও কোনো অসুবিধা হবে না। তারা সেটিও মানেনি। হ্যাঁ বা না কোনোটি বলেনি।প্রতিবেশী দেশ আগেই জানিয়েছে নিরপেক্ষ থাকবে কৌশলগত কারণে প্রতিবেশী দেশ আমাদের পক্ষে থাকেনি উল্লেখ করে মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, আন্তর্জাতিক ফোরামেও নিয়ে গেছি। ১৩২টি দেশ আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমাদের মূল উদ্দেশ্যে এই রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।‘সুতরাং কে কোথায় ভোট দিল, সেটি অত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। সম্প্রতি জাপানও আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন। জাপানে মিয়ানমারের অনেক শ্রমিক আছে। তারাও উদ্যোগ নিয়েছে, মিয়ানমারকে বোঝানোর। আমরা সবসময় আশাবাদী। সব সময় বিশ্বাস করি, আলোচনার মধ্যে সমাধান আসবে। ’ যোগ করেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে একটি মডেল সৃষ্টি করেছি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা লেখালেখি করা উচিত। বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষ নিয়ে ঝামেলা

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, আমাদের সমস্যা হয়ে গেছে তৃতীয় পক্ষ নিয়ে। যারা বিভিন্ন রকম রাইটসের কথা বলে। আমাদের চাপ দিয়ে সেই রাইটসগুলো অর্জনের চেষ্টা করে। এটি নিয়ে আমরা ঝামেলায় আছি। তবে আমাদের নাম্বার ওয়ান দাবি, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। তারপর তারা তাদের রাইটস নিয়ে কথা বলুক।

মহামারিতে কেউ না খেয়ে মরেনি

মহামারিতে কেউ না খেয়ে মরেনি উল্লেখ করে মোমেন বলেন, শুধু দেশে নয় বিদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারাও যাতে না খেয়ে না মরে, সেদিকে খেয়াল রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছি, বিদেশে যারা আছেন তারা যাতে ভালো থাকেন।‘বন্ধু রাষ্ট্রকে বেশ দেন-দরবার করে বলেছি, এই প্রবাসীরা তোমাদের উন্নয়নের সহায়ক। এ আপদকালে তোমরা আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড তখনই যখন আমার একটি নাগরিকও তোমার দেশে না খেয়ে মরবে না।একাধিক রাষ্ট্র তখন কথা দিয়েছে, বৈধ-অবৈধ সবাইকে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেবে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কারণে। তিনি আমাদের অবস্থান এতো উঁচুতে নিয়ে গেছেন, সবাই না করতে পারেনি।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন