রাজধানীর গণপরিবহনে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা নেই

রাজধানীর গণপরিবহনে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রাজধানীর গণপরিবহনে কোনোভাবেই ভাড়া নৈরাজ্য কমছে না। গণপরিবহন কর্মীরা বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকার তোয়াক্কা না করেই যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও গণপরিবহন কর্মীদের মধ্যে বচসা হচ্ছে। অথচ ড্রাইভারের পাশেই বাসের জানালায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা লাগানো রয়েছে। পরিবহন কর্মীরা বলছে, মালিক যেভাবে বলে সেভাবেই ভাড়া কাটা হয়। আর যাত্রীরা বলছে, চেকের নামে রাজধানীর বাসগুলোর গলা কাটা ভাড়া আদায় করছে। ভুক্তভোগী গুপরিবহন যাত্রী ও পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়েও ভাড়া নিয়ে আগের মতোই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ বাসেই তা মানা হয় না। বিরতিহীন সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলেও কার্যত সব বাসই বিরতি দিয়ে চলে। আবার বিভিন্ন জায়গায় চেকের কথা বলে বিআরটিএর কিলোমিটারের হিসাব মানা হয় না। নিয়ম অনুযায়ী গণপরিবহনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ থেকে ৭ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ওই নিয়ম কেউ মানে না। গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, গাবতলী, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদসহ রাজধানীর প্রতিটি রুটেই বাসযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাসের কন্ডাক্টরদের কাছে মালিকপক্ষের মনগড়া বর্ধিত ভাড়ার তালিকা থাকলেও তাতে সরকারি কোনো দপ্তরের সিল-স্বাক্ষর নেই। বাস মালিকরা নির্ধারিত কিছু স্টপেজ ধরে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ রুটের মধ্যবর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে বাসগুলো ইচ্ছামতো যাত্রী তুলছে এবং ভাড়াও তাদের খেয়ালখুশি মতো আদায় করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, সায়েদাবাদ থেকে বাড্ডার দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। মিনিবাসে ওই দূরত্বে ভাড়া আসে প্রায় ১৫ টাকা। অথচ ওই রুটে চলা অনাবিল, রাইদা, ছালছাবিলসহ সিটিং সার্ভিসের নামে বিভিন্ন পরিবহন ৪০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। একইভাবে সদরঘাট থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ীগামী ভিক্টর ক্লাসিক ও আকাশ পরিবহনের বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কিলোমিটার হিসাবে নয়, স্টপেজ বা চেকের হিসাবে বাসে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় রাজধানীর বাসগুলো থেকে কিলোমিটারের হিসাবে ভাড়া হারিয়ে গেছে। সেখানে স্থান করে নিয়েছে স্টপেজ বা চেকের হিসাবে ভাড়া আদায়। এ নিয়ে কোনো যাত্রী কিছু বললেই কন্ডাক্টরের হুমকি শুনতে হয়। এমনকি প্রতিবাদকারী যাত্রীকে মাঝপথে জবরদস্তি বাস থেকে নামিয়ে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
এদিকে যাত্রী হয়রানিতে পিছিয়ে নেই মিরপুর থেকে বাড্ডা লিংরোডগামী বাস নূরে মক্কা পরিবহনও। ওই বাসেও বিরতিহীন বা চেকের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে ওই পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাজুল ইসলাম টিপু জানান, বিআরটিএ নির্ধারিত কিলোমিটার অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এ পরিবহনে ১৫, ১০ ও ৫ টাকার তিনটি চেক রয়েছে। মিরপুর থেকে কালশী পর্যন্ত ২৫ টাকা। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে উঠলেও একই ভাড়া। আর বিরতিহীনের নামে লোকাল বাস চালানোর বিষয়ে তাজুল ইসলাম আরো জানান, বর্তমান অবস্থায় সিটিং সার্ভিস চালানো কঠিন। সারা দিন গাড়ি চালিয়ে অনেক সময় তেল খরচের টাকাটাও উঠে আসে না। তবে যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী তোলার কাজটা বাসের চালক-সহকারীরা করছে। মালিকপক্ষ আলাদা আলাদা চেক রাখলেও পরিবহন কর্মীরা তা মেরে দিচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন) লোকমান হোসেন মোল্লা জানান, সড়কে বাড়তি ভাড়া আদায় বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান স্যার অথবা পরিচালক রোড সেফটি বলতে পারেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন