বরগুনা: বরগুনা জেলায় উপমহাদেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর ‘বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর’ উদ্বোধন করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর প্রাঙ্গণে মুজিবর্ষ উপলক্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্মিত এ জাদুঘর উদ্বোধন করেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।এ যাদুঘরে থাকছে একশ’ ধরনের নৌকা, নৌকা গবেষণা কেন্দ্র।এসময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, পৌর মেয়র শাহাদাত হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি সঞ্জিব দাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, আনোয়ার হোসেন মনোয়ার, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, গণমাধ্যমসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।এর আগে গত ৮ অক্টোবর সকালে জাদুঘরটির ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন ও স্থাপনা নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ড. অমিতাভ সরকার। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাত্র ৮১তম দিনে জাদুঘরের নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরের নামকরণ, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন ৭৮ শতাংশ জায়গাজুড়ে জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৩০ ফুট প্রস্থের নৌকার আদলে নির্মিত জাদুঘরটির দিকে তাকালে দূর থেকেই দেখা যাবে একটি বড় নৌকা। এর মূল ভবন ৭৫ ফুট, প্রতিটি গলুইয়ের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট। এ স্বয়ংসম্পূর্ণ জাদুঘরে থাকছে দেশ-বিদেশের নানান আকৃতির একশ’ প্রকারের নৌকার অনুচিত্র (miniature), একটি নৌকা গবেষণা কেন্দ্র, আধুনিক লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা, ৭ডি থিয়েটার, ফুড ক্যাফে থাকছে। এছাড়া জাদুঘরের থাকছে ওয়েভ ঠিকানা www.boatmuseumbarguna.com। যা ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি হতে সব দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘর খুলে দেওয়া হবে। প্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাহন হিসেবে নৌকা ব্যবহৃত হচ্ছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা ব্যবহার করতেন। নৌকা ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহন করে।
বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূল ঘেঁষে প্রবাহিত পায়রা, বলেশ্বর, বিশখালী ও খাকদোন বিধৌত জেলা বরগুনা। এ জেলার নামকরণের যে একাধিক জনশ্রুতি রয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই নৌকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। জেলায় রয়েছে প্রায় ৬০,০০০ মৎস্যজীবী, নৌকা যাদের জীবনের সাথে অপরিহার্যভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের নৌকা রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা হারিয়ে যাচ্ছে। এ হারিয়ে যাওয়া নৌকার স্মৃতি ধরে রাখতে মুজিব শতবর্ষে জেলা প্রশাসন বরগুনা দেশের প্রথম নৌকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এ জাদুঘরে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ধরণ ও আকৃতির নৌকাসমূহের অনুচিত্র (miniature) সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও নৌকা জাদুঘরের মাধ্যমে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ধারণ, জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশ, বাংলাদেশের চিরায়ত লোকজ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও তরুণ প্রজন্মের নিকট নৌকার অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে।এদিকে বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘর উদ্বোধনের আগে বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। বঙ্গবন্ধু নৌকা জাদুঘরের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং পরিকল্পনার অগ্রপথিক বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে নৌকা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নদীমাতৃক এ দেশে নদী ও নৌকার ইতিহাস হাজার বছরের। এ জাদুঘরে বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া নৌকা এবং বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন অঞ্চলের নৌকার প্রতিকৃতি ও তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি বরগুনায় পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই জেলা প্রশাসন এ উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া এখানে নৌকা গবেষণা কেন্দ্র করা হয়েছে।