নিজস্ব প্রতিবেদক ; করোনায় বিদেশ ফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। ওই লক্ষ্যে সরকারের প্রণোদনা তহবিল থেকে বরাদ্দ ৫শ’ কোটি টাকার তহবিল থেকে ইতোমধ্যে ২শ’ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪১১ কর্মীকে ৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। বাকিদের ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। সরকারি হিসাবে বৈশ্বিক করোনায় সাড়ে ৩ লাখ কর্মী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। তাদের দেশেই পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় ফিরে আসা কর্মীদের সহজ শর্তে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কারণ দেশে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বেকারত্ব দূরীকরণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশে প্রতিবছর আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ লাখ কর্মী শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। আর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে যায়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশ থেকে বিগত ২০১৯ সালে ৭ লাখ ১৫৯ কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছে। কিন্তু বর্তমানে মহামারী করোনা কারণে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বৈদেশিক কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় দেশে-বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক রি-ইন্ট্রিগেশনসহ সামগ্রিক সুরক্ষা, বর্তমান শ্রমবাজার ধরে রাখা, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান, বন্ধ শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণসহ করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে করোনা মহামারীকালে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর, সংস্থা নিয়ে ১৪টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের মাধ্যমে দুস্থ ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসী কর্মীদের মাঝে বিশেষ বরাদ্দ হিসাবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৫ হাজার টাকার ওষুধ, ত্রাণ ও জরুরি সামগ্রী বিতরণ এবং করোনাকালে সৌদি আরবের ডিপোর্টেশন সেন্টারে অবস্থানরত মোট ২০৭ নারী কর্মীকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তহবিল থেকে বিমান ভাড়া দিয়ে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। একইভাবে লেবানন থেকে ৯৫ কর্মী এবং ভিয়েতনামে আটকে পড়া ১০৫ কর্মীকে দেশে ফেরত আনা হয়। লকডাউনের সময় গত ২৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বিদেশ প্রত্যাগত ৫ হাজার ৯ শত ৭৪ কর্মীকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে বিমানবন্দরে তাৎক্ষণিক মোট ২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কর্মীদের বিষয়ে কোন প্রকার অবহেলা না করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা। কারণ দক্ষ জনবল তৈরি হলেই চাহিদাভিত্তিক বৈশ্বিক কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। প্রতিবছর কয়েক লাখ কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন দেশের বেকারত্ব কমে, অন্যদিকে তাদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, অভিবাসী কর্মীদের স্বাস্থ্য, রেমিটেন্স প্রেরণ, তথ্যপ্রবাহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে ও সেবা প্রদানে বাংলাদেশ মিশনের শ্রম উইংগুলোকে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে উইংগুলোকে আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন আগের তুলনায় শ্রম উইংগুলো অনেক বেশি কর্মিবান্ধব। তারা বিভিন্ন দেশে খোঁজখবর রাখছে। কোথাও কোন কর্মী বিপদে পড়লে শ্রম উইংগুলো দ্রুত তা সমাধান করার চেষ্টা করছে। বর্তমানে দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে সারাদেশে ৬৪টি টিটিসি ও ৬টি আইএমটি চালু রয়েছে। আর উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মুজিববর্ষের বিশেষ উদ্যোগে মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরের স্মারক হিসাবে উপজেলা পর্যায়ে আরো একশ’টি টিটিসি নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ জানান, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কর্মী দেশে ফিরেছে। করোনার মহামারী এ বছর শ্রমবাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে অল্পসংখ্যক কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে পেরেছে। তারপর থেকে বিশ্বের সব শ্রমবাজারই বন্ধ হয়ে গেছে।