আড়াই লাখ  টাকার সরকারি ভবন মাত্র ৩২ হাজারে বিক্রি!

আড়াই লাখ  টাকার সরকারি ভবন মাত্র ৩২ হাজারে বিক্রি!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আড়াই লাখ  টাকার ভবনটির সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৩২ হাজার  টাকা।জানা গেছে, জরাজীর্ণ সরকারি ভবন ক্লাস নেওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় আদিতমারী উপজেলার সাতটি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণে বরাদ্দ দেয় সরকার। পরিত্যক্ত এসব ভবন বিক্রি করতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশে উপজেলা প্রকৌশল দফতরকে মূল্য নির্ধারণের চিঠি পাঠায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে সব ভবনের মূল্য নির্ধারণ করে দিলে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা শিক্ষা কমিটি। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের নির্ধারিত মূল্যে দেখা গেছে, হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল্য ৩৮ হাজার ৪৭৪ টাকা, ১  নম্বর দুরাকুটি কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ হাজার ৩৭২ টাকা, দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৫ হাজার ৪২ টাকা, মহিষখোচা বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩২ হাজার ২৬১ টাকা, ছাবেরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাম ১৪ হাজার ৫৭০ টাকা, ফলিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাম ৩৯ হাজার ৮৩৪ টাকা এবং অ্যাঙ্গেলের (লোহার) কাঠামোর ভেলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বড় বড় দু’টি পাকা ঘরের মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ২৮ হাজার ৬২৮  টাকা।উপজেলা প্রকৌশল দফতরের বেঁধে দেওয়া সরকারি মূল্য দেখে অনেকেই দেশকে শায়েস্তা খাঁর আমল বলে উপহাস করেছেন। সরকারি মূল্যের এক টাকা বেশি দর হলেই বিক্রিতে বাঁধা থাকে না প্রকাশ্য নিলাম কমিটির। ফলে আলোচনা করে একটি চক্র এসব ভবন নামমাত্র মূল্যে সরকারের কাছ থেকে কিনে ওই বিদ্যালয় মাঠেই ছয়/সাত গুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। এতে অনেক বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।  সাতটি ভবনের মধ্যে চারটি প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে প্রকৌশল বিভাগের বেঁধে দেওয়া দামে।  বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভেলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটির ব্যাপারে নেগোসিয়েট ব্যর্থ হয়ে হট্টগোল পাকিয়ে কর্তৃপক্ষকে নিলাম স্থগিত করতে বাধ্য করিয়েছে নেগোসিয়েট চক্রটি।  বিক্রিত চারটি নিলাম থেকে জানা গেছে, মহিষখোচা বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি মূল্য ৩২ হাজার ২৬১ টাকার স্থলে নিলামে ৩৫ হাজারে বিক্রি করে নিলাম কমিটি। সেই কমিটির উপস্থিতিতে ওই ভবনটি দুই লাখ ৪১ হাজার টাকায় বিক্রি করেন নেগোসিয়েট চক্রটি। দেওডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি নিলামে মাত্র ৩৬ হাজারে বিক্রি হলেও চক্রটি ওই মাঠেই বিক্রি করেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। একইভাবে হরিদাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৪ হাজার ৯৭৪ টাকায় ও দুরাকুটি কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৩ হাজার  টাকায় বিক্রি করে নিলাম কমিটি। নেগোসিয়েট চক্রটি  প্রকাশ্য নিলামের সিন্ডিকেট তৈরি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, সরকারি পণ্য কেনার সময় যেমন দাম ছয়/সাত গুণ বাড়ানো হয়। একই ভাবে বিক্রির সময়ও ছয়/সাত গুণ কমানো হয়। সরকারি কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পকেট ভড়াতে গোপনে নিলাম দেন এবং নেগোসিয়েট চক্রগুলোকে লালন করেন। এজন্যই সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিক্রিত মূল্য দেখে মনে হচ্ছে-দেশের বাজারে শায়েস্তা খাঁ’র আমল চলছে।  নিলাম কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনএম শরীফুল ইসলাম বলেন, প্রকৌশল বিভাগ সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেছেন। সেই মূল্যের সমপরিমাণ হলে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রিতে বাঁধা থাকে না। সরকারি মূল্যের ওপর দাম পাওয়ায় তা বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা প্রকাশ্য ডাকে ডাকতে রাজি হয় না। তখন বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়।ভবনের মূল্য নির্ধারণকারী উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, মনগরা নয়, সরকারি সিডিউল মতেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবনগুলো দেখে মাপার পরই সরকারি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি মূল্যে অতিক্রম  হলেই প্রকাশ্য নিলামে বিক্রির নিয়ম আছে।  প্রকাশ্য নিলাম কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, সরকারি মূল্যের ওপর হলে নিলামে বিক্রি করা যায়। নিলামে বিক্রি করা ভবনগুলোর সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেন উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে নিলামে কোনো অনিয়ম হলে তা অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জাপার কর্মসূচি স্থগিত

দক্ষ যুব গড়বে দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ  সীতাকুণ্ডে যুব দিবস উদযাপন