চট্টগ্রাম: কুয়াশামুক্ত আলোঝলমলে সকালে একে একে পাঁচটি জাহাজ রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। এ সময় নানা বয়সী এসব মিয়ানমারের নাগরিকের চোখে মুখে খেলা করছিল নতুন স্বপ্ন।পরনে ছিল লাইফ জ্যাকেট। নদীতে ছিল নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, নৌ পুলিশের স্পিড বোটগুলোর টহল, কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক জাহাজে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভাসানচর। এর আগে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে দুই দফায় ৩০টি বাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য দ্বিতীয় দফায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে আনা হয়। পতেঙ্গার বিএফ শাহীন কলেজ মাঠে তাদের রাতযাপনের ব্যবস্থা করা হয়। এর আগে সোমবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ৩০টি বাস দুই ধাপে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করে।প্রথম দফায় ১৩টি বাস এবং দ্বিতীয় দফায় ১৭টি বাস সোমবার রাতে নগরের পতেঙ্গার বিএফ শাহীন কলেজ মাঠে এসে পৌঁছায়।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) অলক বিশ্বাস জানান, কক্সবাজার থেকে দুই দফায় ১ হাজার ৮০৪ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার সকালে পতেঙ্গা বোট ক্লাব থেকে তাদের নিয়ে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে জাহাজ ছেড়ে যায়। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় থাকা ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে নোয়াখালী সংলগ্ন দ্বীপ ভাসানচরে নেওয়া হয়। প্রথম দলকে পাঠানোর ২৪ দিন পর সোমবার দ্বিতীয় দলকে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলো।মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নতুন পুরনো মিলে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখন বসবাস করছেন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে। প্রাথমিকভাবে সেখান থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার।এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মে মাসে সাগর পথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরে ভাসমান অবস্থা থেকে উদ্ধার করে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে আশ্রয় দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ৪ ডিসেম্বর আরও এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়।ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়। যেখানে রয়েছে- শিশুদের খেলার মাঠ, স্কুল, চিকিৎসা কেন্দ্র, দ্বীপে কর্মরত দেশি-বিদেশি সংস্থার লোকজনের জন্য থাকার আলাদা ভবনসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।এ ছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছে ভাসানচরে।