নিজস্ব প্রতিবেদক ; গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে সারাদেশে ৯৭৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০৮টি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, মোট ভিকটিমের ৬২৭ জনই শিশু। এ ছাড়া ওই সময়ে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ২০০ জন এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ জন নারী। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪১ জন নারী এবং আত্মহত্যা করেছেন ১০ জন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় খুন হয়েছেন ৩ জন নারী এবং ৯ জন পুরুষ। ওই সময়ের মধ্যে নানা সহিংসতায় হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৪৫ শিশু। গতকাল সোমবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান, ‘ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’ নামের একটি সংগঠন। এটি মূলত মানবাধিকার কর্মীদের জাতীয় প্লাটফর্ম। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। সংগঠনটি জানায়, ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জেলার পার্বতীপুরে এক শিশু অপহরনের পর ধর্ষণে শিকার হয়। ওই ঘটনার পর মামলা দায়ের হয়, চার বছর পেরিয়ে গেলেও আজও ওই ঘটনার বিচার শেষ হয়নি। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে যা বেশির ভাগই সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বা দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লীশ্রীর কর্মকর্তা শামসুন্নাহার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পল্লীশ্রীর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরা বেগম, আমরাই পারি জোটের কো-চেয়ারপারসন এম বি আকতার, নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক, সন্ধ্যা রাণী বাগচী, নেটজ্ বাংলাদেশের প্রতিনিধি আফসানা বিনতে আমিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আগত বাংলা ট্রিবউিনের সাদ্দিফ অভি, সমকালের স্টাফ রিপোর্টার সাজিদা ইসলাম পারুল, একাত্তর টিভির নাদিয়া শারমিন, নিউ এইজ এর এরশাদ আহামাদ তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। দিনাজপুরের আরও কিছু নির্যাতিত নারীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ওই ৯ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৩২ জন নারী। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছেন ২৭৯ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৭৪ জন। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৮ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৬ জনকে এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ১৭ জন নারী। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও এ দেশের নারী ঘরে-বাইরে সব সম্পর্কে, সব বয়সে, শ্রেণি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে জানিয়ে এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে ১৮০ দিনের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা নিষ্পত্তি করা, এসব ঘটনার বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা, এ-সংক্রান্ত মামলায় সাক্ষী প্রদান প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করা, উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী-শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা-চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা, নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা, সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইনকে সংশোধন করে সময়োপযোগী করাসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এ সময় বক্তারা বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও ভয়ংকর, নিষ্ঠুর ও বর্বর মহামারি নারী ও শিশুদের ওপর যৌনসহিংসতা, ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিগত কয়েক বছর ধরে যৌন সহিংসতার মাত্রা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নির্যাতনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি নৃসংসতার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করি, গণমাধ্যমের সহযোদ্ধারা দেশব্যাপী ধর্ষণ ও সব ধরনের নারী নির্যাতনের সংবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে উপস্থাপন করে সুবিচার প্রাপ্তির পথকে তরান্বিত করবেন।