নিজস্ব প্রতিবেদক ; রাজধানীর সড়কগুলোতে চলাচলকারী অযান্ত্রিক গাড়ি থেকে সিটি করপোরেশন রাজস্ব পেলেও সব ধরনের মোটরযানের রাজস্ব আদায় করছে বিআরটিএ। বিষয়টিকে বৈষম্যমূলক অভিহিত করে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই মোটরযান থেকে আদায়কৃত রাজস্বে ভাগ চায়। বর্তমানে ঢাকার মোটরযান থেকে যাবতীয় ফি বর্তমানে বিআরটিএ আদায় করলেও একসময় সিটি করপোরেশনের ওপরেই তা আদায়ের দায়িত্ব ছিল। ১৯৮৮ সালে বিআরটিএর কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত ‘নগর শুল্ক’ নামে যানবাহন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সিটি করপোরেশন রাজস্ব আদায় করতো। ওই সময় নগর শুল্ক ঢাকা শহরে ঢোকার পথেই যানবাহন থেকে আদায় করা হতো। পরে বিআরটিএ যানবাহন থেকে যাবতীয় সব রাজস্ব আদায় শুরু করে। তার বিনিময়ে সিটি করপোরেশনকে প্রতি বছর কিছু টাকা থোক বরাদ্দ দেয়া হয়। যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা দাবি করছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) এবং দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) ঢাকায় রাস্তা বানায়। পাশাপাশি করপোরেশনের দায়িত্ব সেগুলো মেরামত, পরিচ্ছন্ন রাখা, সড়ক বাতি লাগানোসহ সব ধরনের দেখভাল করা। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় যেসব গাড়ি (মোটরযান) চলে সেগুলোর রুট পারমিট ফি, রোড ট্যাক্সসহ সব ফি আদায় করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিএ)। বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতায় পাকা রাস্তার পরিমাণ কম-বেশি ৩ হাজার কিলোমিটার। তার মধ্যে ৩০০ কিলোমিটারের মতো প্রধান সড়ক। বাকি প্রায় ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সরু সড়ক। ওসব সড়ক নির্মাণ থেকে রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশন করে থাকে। সেজন্য প্রতি বছরই সংস্থা দুটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়। সড়কের পাশাপাশি ফুটপাত, ড্রেন, মিডিয়ান, সড়ক বাতির পেছনেও ব্যয় হয় মোটা অংকের টাকা।
সূত্র জানায়, সারা দেশে যত গাড়ি চলাচল করে তার প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ রাজধানী ঢাকায় চলাচল করে। সারা দেশে নিবন্ধিত গাড়ির (মোটরযান) সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। তার ১৬ লাখই ঢাকা মেট্রো এলাকা থেকে নিবন্ধন নেয়া। কিন্তু গাড়ির নিবন্ধন, মালিকানা বদল, ড্রাইভিং লাইসেন্সের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও চালকদের কাছ থেকে রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, রোড ট্যাক্সসহ বিভিন্ন ধরনের ফি বিআরটিএ আদায় করে আসছে। সংস্থাটি মেট্রো, বিভাগীয় ও সার্কেল অফিসগুলোর মাধ্যমে সারা দেশে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছর বিভিন্ন ধরনের ফি আদায় করে সারা দেশ থেকে ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা (আয়করসহ) রাজস্ব আয় হয়েছে। আর গত ৪ বছরে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। তাছাড়া শুধু ঢাকা থেকে নিবন্ধন নেয়া গাড়ি নয়, ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিপুলসংখ্যক গাড়িও সিটি করপোরেশনের সড়ক ব্যবহার করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও গার্মেন্টসের পণ্য পরিবহন, কাঁচামাল ও মালামাল আনা-নেয়ার কাজে সড়কের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি ওজন নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ফলে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভারী মালামাল নিয়ে সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা ও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত গাড়ি চলায় দ্রুত নষ্ট হয় রাস্তা। তাতে রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হয় বাড়তি অর্থ। ওসব মেরামতের জন্য গাড়ি থেকে বিআরটিএ যে রাজস্ব আয় করে, তার একটা অংশ সিটি করপোরেশনের পাওয়া যৌক্তিক বলে দুই সিটি কর্পোরেশনই দাবি করে।
সূত্র আরো জানায়, সিটি করপোরেশন আইন-২০০৯ অনুযায়ী সরকারি সব ধরনের করের ওপর কর বসানোর এখতিয়ার সিটি করপোরেশনের রয়েছে। অথচ প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ঢাকার অনেক সড়কই ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিআরটিএর কাছ থেকে রাজস্বের একটা অংশ সিটি করপোরেশন পেলে তা দিয়ে ওই সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব করা সম্ভব।
এদিকে অতিসম্প্রতি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) বোর্ড সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএসসিসি) শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তবে ডিটিসিএ বোর্ডের চেয়ারম্যান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিষয়টি নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বোর্ড সভায় বিআরটিএর রাজস্ব আদায়ের ভাগই শুধু নয়, মোটরযানের রুট পারমিটের বিষয়টিও ডিটিসিএর অধীনে আনার সুপারিশ করেছেন দুই সিটি মেয়র।
অন্যদিকে এ বিষয়ে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান জানান, দুই সিটি করপোরেশন বিআরটিএর কাছ থেকে রাজস্ব নেয়ার একটা প্রস্তাব করেছে। তবে সেটা কীভাবে করা হবে তার কোনো রূপরেখা ডিটিসিএর হাতে এসে পৌঁছেনি।