নিজস্ব প্রতিবেদক ;প্রতিবছর সরকারের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ছাপানো ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই নিজস্ব কোন সংরক্ষণাগার নেই। ফলে বিতরণের এলাকার বইগুলো কোনমতে দু’/একটি স্থানে রাখতে হয়। সেখান থেকে এলাকার স্কুলে স্কুলে বই বিতরণ করা হয়। সংরক্ষণাগার না থাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো এখন নিজেদের প্রয়োজনীয় বই ছাড়া পাশর্^বর্তী স্কুলের বই সংরক্ষণ করতে চায় না। ফলে পাঠ্যপুস্তক সংরক্ষণ করা নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অথচ প্রতিবছর বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা এবং ছাপার পরিধিও বাড়ছে। এমন অবস্থায় এনসিটিবি সরকারি বিনামূল্যের বই সংরক্ষণ নিয়ে বেকায়দায় পড়ছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বা এনসিটিবি পাঠ্যবই নিয়ে মূল কাজটি করে থাকে। বিগত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের একটি সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে বছরের প্রথম দিনই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের সকল শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই বিতরণ। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকার কারণে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর হাতে প্রতি বছরই সঙ্কট ছাড়াই ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি কপি বই যাচ্ছে। অথচ প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া হলেও দেশে ৩৬ কোটি কপি পাঠ্যবই রাখার জন্য গুদাম বা সংরক্ষণের একটিও জায়গা নেই। প্রতিবছরই প্রায় তিন মাস আগে থেকেই দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠানো শুরু হয়। কিন্তু সেখানে বই রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। গুদাম না থাকায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলো নিজেদের প্রয়োজনীয় বই ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের বই সংরক্ষণ করতে পারছে না। ফলে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ পাঠ্যবই নষ্ট হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিনামূল্যের পাঠ্যবই রাখার সঙ্কট উত্তরণে বেশ কয়েক বার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এই সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ‘পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার’ নির্মাণের একটি উদ্যোগও ঝুলে রয়েছে। অথচ পাঠ্যবই জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সারাদেশের স্কুলে বিতরণের আগে চার থেকে পাঁচ মাস জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রতিবছর কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সঙ্কট শুরু হয়। আর এ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের একটি তাগাদা শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুভব করলেও জানুয়ারিতে বই বিতরণ হয়ে গেলে ওই আগ্রহ আর থাকে না। কিন্তু প্রতিবছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলায় পাঠ্যবই সংরক্ষণ করতে হয়। কারণ কোনো স্কুলই ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের আগে বই নিতে চায় না। ফলে দু’/একটি স্কুলে যেখানে বই রাখা হয়, তারাও জায়গার অভাবে অন্য স্কুলের বই রাখতে চায় না।
এদিকে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা পাঠ্যবই সংরক্ষণাগারের প্রয়োজনীয়তার দিক তুলে ধরে জানান, এই সমস্যার সমাধান হলে একটি বড় কাজ হয়। কারণ সারাদেশের শিক্ষা কর্মকর্তা-শিক্ষকদের প্রতিবছর এই সমস্যায় পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় বই সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। জানুয়ারির প্রথম দিন বই বিতরণের আগে পুরো সময় বই রাখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে স্থান নেই। তবে সরকার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। একটি উদ্যোগও আছে। যেখানে জেলা-উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার করার উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সমস্যাটির সমাধান হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।