নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খিলক্ষেতে দুই যুবক, মতিঝিলে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক যুবক, বিমানবন্দর এলাকায় একজন গৃহকর্মী, বাড্ডা ও বংশালে দুইজন তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর খিলক্ষেতের তিনশ ফিট এলাকায় কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- আজমিন খান লামী (২৯) ও তার আত্মীয় আমির হোসেন রিয়াজ (১৮)। দুজনেই দক্ষিণ বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। আমির হোসেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম আক্তার হোসেন। আজমিন খান চাকরির পাশাপাশি পাঠাওয়ের চালক ছিলেন। তার বাবার নাম মিজানুর রহমান। আমিরের ভাই অভি জানান, গতকাল শুক্রবার সকালে তিনশ ফিট সড়কে গিয়েছিলেন দুজন। তিনশ ফিট এলাকায় সড়কে ইউটার্ন নেয়ার সময় একটি কাভার্ড ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন তারা। পরে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে। ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর মতিঝিল থেকে অজ্ঞাতপরিচয় (২৪) এক যুবক লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে মতিঝিল থানার এসআই সুজন কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মতিঝিল সিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় এক যুবকের লাশ পড়ে আছে এমন খবরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সেখানে যাই। পরে সেখান থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, সিটি সেন্টার ভবন থেকে লাফিয়ে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে অথবা কেউ মেরে ফেলে দিয়েছে। এখনও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর বিমানবন্দর থানাধীন এক নম্বর সেক্টরের একটি বাসার ছাদ থেকে নিচে পড়ে ইয়াসমিন আক্তার (১৪) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ইয়াসমিন আক্তার টেকনাফের আবদুল জলিলের মেয়ে। তিনি ওই বাসায় চারবছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিমানবন্দর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, এক নম্বর সেক্টর ১২ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। ওই গৃহকর্তার নাম ডা. ইকবাল। গতরাত ১টা দিকে বাসার পঞ্চম তলার ছাঁদ থেকে একটি কাপড় বেঁধে নিচে নামার চেষ্টা করছিলে ইয়াসমিন। তখন কাপড় থেকে নিচে পড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। খবর পেয়ে রাতেই তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কি কারণে তিনি বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল তা এখনো জানা যায়নি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
এছাড়া, রাজধানীতে পৃথক ঘটনায় বাড্ডায় সাথী (১৮) ও বংশালে তন্নী (১৫) দুই কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ও দুপুর ২টার দিকে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বংশালে মৃত্যু হওয়া তন্নীর বড় ভাই মো. তামজিদ হোসেন জানান, তারা বংশাল নাজিরাবাজার ৫৩ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকেন। তন্নীর বাবার নাম আবুল হোসেন। স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করে তন্নী। সন্ধ্যায় রুমের দরজা বন্ধ করে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয় তন্নী। পরে দেখতে পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার গলায় ফাঁস দেওয়ার কারণ জানাতে পারেনি স্বজনরা। বিস্তারিত বলতেও রাজি হয়নি কেউ। এদিকে বাড্ডায় মৃত্যু হওয়া সাথীর মা বিউটি বাড়ই জানান, তারা বাড্ডা আলী মোর এলাকাতে একটি বাসায় ভাড়া থাকে। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ কোটালি পাড়া উপজেলার পশ্চিম দেবগ্রামে। সাথীর বাবার নাম রণজিৎ বাড়ই। গাজীপুরে একটি কলেজে পড়তো সে। মোবাইলে কোনো ছেলের সঙ্গে সে কথা বলতো। দুপুরে বাসায় সাথী ছাড়া কেউ ছিলো। তখন প্রতিবেশীর মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ দেখতে পান। পরে দরজা ভেঙে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় সাথীকে। এরপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের (পরিদশর্ক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, দুপুরে সাথীকে ও রাতে তন্নীকে তাদের পরিবার হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।