পদ্মা সেতু: স্বপ্ন উড়ছে কুয়াকাটায়

পদ্মা সেতু: স্বপ্ন উড়ছে কুয়াকাটায়
বরিশাল: ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশার পদ্মা সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান। যার মধ্য দিয়ে জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হয়েছে।কিন্তু হিসেব কষলে দেখা যায়, মূলত গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক পথের সংযোগ স্থাপনও হয়েছে।স্বপ্নের এই সেতুর ধাপে ধাপে এমন এগিয়ে যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চল তথা গোটা বরিশাল বিভাগের মানুষ। কারণ এই সড়ক পথের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে।ব্যবসায়ীদের দাবি, পদ্মা সেতু পুরোপুরি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের পর্যটন সেক্টরে বিশেষ উন্নয়ন ঘটবে। পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটাস্থ সমুদ্র সৈকতসহ বরিশাল-পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার ভাসমান হাট-বাজার, বরিশালের শাপলার বিলকে ঘিরে পর্যটকদের সমাগম বাড়বে। সমাগম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব পর্যটন এলাকা ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন দুয়ার খুলবে।পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাসিন্দা জসিম পারভেজ  বলেন, বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার কিংবা পটুয়াখালী জেলা সদরে ঢাকা থেকে সহজে নৌ-পথে আসা যায়। তবে উভয় জায়গা থেকেই কুয়াকাটায় যেতে সড়ক পথে যেতে হয়। তবে এতে কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগছে ১২ ঘণ্টার মতো। আর সাগরকন্যা কুয়াকাটা যে উপেজেলায় অবস্থিত সেই কলাপাড়াতেও ঢাকা থেকে লঞ্চে আসতে ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় লাগছে। সেখান থেকেও পর্যটকদের বিকল্প যানবাহনে কুয়াকাটায় যেতে হয়। আর পরিবহন পরিবর্তনের এ ঝক্কির কারণে সড়কপথে কুয়াকাটার যাত্রীর সংখ্যা আগে থেকেই কিছুটা বেশি। তিনি জানান, বর্তমানে ঢাকা থেকে মাওয়া ফেরি হয়ে কুয়াকাটায় আসতে ৭-৮ ঘণ্টা আর দৌলতদিয়া হয়ে আসতে ৮/৯ ঘণ্টা সময় লাগছে। সেখানে পদ্মাসেতু ও পটুয়াখালীর লেবুখালীর পায়রা সেতু হলে কমপক্ষে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় কমে যাবে। আর এক্সপ্রেসওয়ের মতো ওয়ানওয়ে সড়ক হলে তো সময় আরও কমবে। এর ফলে পর্যটকরা কক্সবাজারের থেকে কুয়াকাটায় দ্রুত সময়ে আসতে পারবে।  স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বেঁধে আছেন পদ্মা সেতু ঘিরে। তারা বলছেন, দূরত্ব কম হওয়ার পরও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফেরি থাকায় বিলাসবহুল বাসের সংখ্যা খুবই কম ঢাকা-কুয়াকাটা রুটে। তবে প্রাকৃতিকভাবে নিরাপদ হওয়ায় এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে কখনো পর্যটকরা বিমুখ ছিলেন না। আর পদ্মাসেতু চালুর মধ্য দিয়ে সড়ক পথের যে উন্নয়ন ঘটবে তাতে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় আসতে কোন ফেরির প্রয়োজন হবে না। এতে কক্সবাজারের থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার কম দূরত্বে অবস্থিত কুয়াকাটায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।স্থানীয় ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ জানান, পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। আর পদ্মাসেতু চালু হলে ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে কুয়াকাটায় আসতে পারবে যে কেউ।  কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা হোটেল ব্যবসায় সেবার মান বাড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বহু বিনিয়োগকারী পাঁচ তারকা মানের হোটেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন।তিনি বলেন, পদ্মা সেতু কুয়াকাটায় ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের দরজা খুলে দেবে, সৃষ্টি হবে নতুন দিগন্তের, এটাই প্রত্যাশা আমাদের।  এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই কুয়াকাটায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। হোটেল-মোটেল-রিসোর্টে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ আধুনিকতার ছোঁয়া। সমুদ্র বিলাসে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নৌযান, যা দিয়ে সাগরের বুকে জেগে ওঠা চরবিজয়সহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপদে ঘুরতে পারছেন পর্যটকরা।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন