গত পাঁচ/সাত বছর ধরে দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মা সেতু দেখতে আসা মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকা ও চরাঞ্চল।
পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানো সেতুর অবকাঠামো, বিস্তৃত ধুধু চরভূমি বা ফসলের ক্ষেত, নদী শাসন বাঁধে ঘণ্টার পর ঘন্টা বসে থেকে নদীর স্নিগ্ধ বাতাসের ছোঁয়া আর পদ্মার স্বচ্ছ জলে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো- এ বিষয়গুলো লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।
আর এর থেকেই পর্যটনের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয় লোকজন। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে তারা এ সম্ভবনার কথা তুলে ধরেন।
উপজেলার কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকার বাসিন্দা আব্দুস শুক্কুর মিয়া বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করার পর যখন কাওড়াকান্দি ঘাটটি সরিয়ে কাঁঠালবাড়ীতে নেওয়া হলো, তখন এ এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলাম আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও বুঝি শেষ! কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নতুন কিছু সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। এ এলাকা থেকে ঘাট সরিয়ে নেওয়ার পর থেকে অনেকটাই কোলাহল কমে গেছে। ঘাটের ব্যস্ততা না থাকলেও দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিকেলে সাধারণ মানুষ আসে ঘুরতে। পদ্মার পাড় ধরে কেউ হাঁটে, কেউ নদীর পাড়ে বসে থাকে, আবার কেউ কেউ নৌকায় করেও নদীতে ঘুরে বেড়ায়। নানা বয়সী মানুষের এ পদচারণায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পসারও বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভাসমান মুখরোচক খাবারের দোকান বেড়েছে। বেড়েছে রেস্টুরেন্টও।
তিনি আরও বলেন, নদীর পাড়ের নদীশাসন বাঁধে প্রতিদিন বিকেলে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। বিকেল থেকে রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা থাকে এখানে। বিকেলেই বেশি লোকজন আসে ঘুরতে।
স্থানীয় শিক্ষক মিয়াউল আলম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে পদ্মার পাড় কেন্দ্রিক ঘুরতে আসা লোকজনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আসলে আশেপাশে কোথাও তেমন কোনো দর্শনীয় স্থান না থাকায় এ অঞ্চলের মানুষ পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসে। এ দিকটি বেশ ভালো। মূলত পদ্মা সেতুকে ঘিরেই মানুষের মধ্যে এ চঞ্চলতা দেখা দিয়েছে। পদ্মার চর এলাকা পর্যটন কেন্দ্রের জন্য বেশ আদর্শ বলেই মনে হয়। পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ এলাকায় গড়ে উঠতে পারে পর্যটনকেন্দ্রও।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, পদ্মার পাড়ে ঘুরতে আসা লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। হোটেলগুলোতে পদ্মার ইলিশের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ঘুরতে আসা লোকজন এখানে বসে ইলিশ ভাজা খেতে পছন্দ করে।
শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে এ চরাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এখানে বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে চরাঞ্চল, নদী কেন্দ্রিক। আবার সৌন্দর্যমণ্ডিত মহাসড়ক কেন্দ্রিক। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। এ অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটবে বলে আশা করছি।