নিজস্ব প্রতিবেদক ;করোনার প্রভাবে দেশের হাজার হাজার শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়া ওসব কারখানার অধিকাংশের ক্ষেত্রেই মার্চ মাসে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বন্ধ হওয়া ওসব কারখানায় ১৭ লাখ ১০ হাজার ২২১ জন শ্রমিক ছিল। কারখানা বন্ধ হওয়ায় ওসব শ্রমিকেরও চাকরি হারানোর কথা। বন্ধ হওয়া কারখানার বেশির ভাগই গাজীপুর অঞ্চলে অবস্থিত। ওই এলাকায় ২ হাজার ২২৪টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। তার মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা ৬৪২টি ও গার্মেন্টসের বাইরে অন্যান্য খাতের ১ হাজার ৫৮২টি। তার বাইরে বন্ধ হওয়ার তালিকায় ঢাকায় গার্মেন্টস ২৮টি ও অন্যান্য কারখানা ১৯৬টি, কিশোরগঞ্জে ৭০১টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১৯১টি, নারায়ণগঞ্জে ১৭টি, ময়মনসিংহে ১৬৩টি, সিলেটে ৭১টি, মুন্সিগঞ্জে ৮৩টি, ফরিদপুরে ১৩০টি, খুলনায় ৪২৬টি, যশোরে ২৪৪টি, কুষ্টিয়ায় ৩৪৪টি, দিনাজপুরে ৫৭৮টি, রাজশাহীতে ১ হাজার ২১টি, রংপুরে ৪২টি, বগুড়ায় ৬৪৯টি, সিরাজগঞ্জে ৩৫০টি, পাবনায় ২৬৩টি, বরিশালে ৩০৪টি এবং বাদ বাকি কারখানা অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তালিকায় থাকা কারখানার সংখ্যা ৫৮ হাজার ৮৩৬টি। সংস্থাটির সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৮ হাজার ২৯টি শিল্প-কারখানা। বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ৭১৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে; আর অন্য খাতের রয়েছে ৭ হাজার ৩১৬টি। অবশ্য করোনার আগে থেকেই বেশ কিছু কারখানা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তালিকায় থাকা কারখানার বেশির ভাগই করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কী পরিমাণ কারখানা বন্ধ হয়েছে ডিআইএফইর কারছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।
সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে ৯০টি কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করেছে। এর মধ্যে ৭৫টি গার্মেন্টস খাতের এবং অন্যান্য খাতের ১৫টি। আর লে অফ (সাময়িক বন্ধ) হয়েছে ২৮টি কারখানা। ওসব কারখানায় সব মিলিয়ে বেকার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার শ্রমিক। তার মধ্যে গার্মেন্টস কারখানায় কাজ হারিয়েছেন ৫১ হাজারের কিছু বেশি শ্রমিক। তবে কর্মহীন হওয়ার বিষয়ে ডিআইএফইর ওই তালিকার সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের তথ্য মিলছে না। শ্রমিক নেতাদের তথ্যানুযায়ী করোনার ধাক্কায় গার্মেন্টস খাতেই বেকার হয়েছে ১ লাখেরও বেশি শ্রমিক।
এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার আগে থেকেই মূলত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অভিঘাতে শ্রমনির্ভর অনেক কারখানা টিকতে পারছিল না। করোনা এসে তা আরো বেগবান করেছে। এখন বাস্তবতা বিবেচনায় চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী চাহিদাসম্পন্ন দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে হবে। তাছাড়া সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও ছোট শিল্পোদ্যোগ প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ডিআইএফইর যুগ্ম-মহাপরিদর্শক মো. সামশুল আলম খান জানান, বন্ধ হওয়ার তালিকায় থাকা কারখানাগুলোর বেশির ভাগই করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের পর এখন পর্যন্ত কতো কারখানা বন্ধ হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য ডিআইএফইর কাছে নেই। তবে কারখানা বন্ধের তালিকা আগে থেকেই নিয়মিত হালনাগাদ করে আসছে ডিআইএফই। করোনার আগে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল। তাছাড়া তৈরি পোশাক কারখানার বাইরে অন্য কারখানাগুলো মূলত করোনাকালেই বন্ধ হয়েছে বেশি।