করোনায় স্কুল বন্ধ না রাখার আহ্বান ইউনিসেফের

করোনায় স্কুল বন্ধ না রাখার আহ্বান ইউনিসেফের

নিজস্ব প্রতিবেদক :চলতি বছরের নভেম্বরে কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ৩৮ শতাংশ বেড়েছে, যা বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ৯ কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণে অগ্রগতি ও সার্বিক কল্যাণের ওপর উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চাপ সৃষ্টি করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। ইউনেস্কোর সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচজন স্কুলগামী শিশুর মধ্যে প্রায় একজনের বা মোট ৩২ কোটি শিশুর ক্লাসরুম বন্ধ রয়েছে, যা গত ১ নভেম্বরের ২৩ কোটি ২০ লাখের চেয়ে প্রায় ৯ কোটি বেশি। অন্যদিকে, অক্টোবর মাসে স্কুল বন্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ কমেছে। ইউনিসেফের শিক্ষা কার্যক্রমের বৈশ্বিক প্রধান রবার্ট জেনকিনস বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমরা সবকিছু শেখা সত্ত্বেও, কমিউনিটিতে সংক্রমণে স্কুলের ভূমিকা এবং স্কুলে শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে যেসব পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি, সেক্ষেত্রে আমরা ভুল পথে ধাবিত হচ্ছি এবং এটা বেশ দ্রুততার সঙ্গে হচ্ছে। তথ্য-প্রমাণ বলছে, স্কুলগুলো এ মহামারির প্রধান চালিকা শক্তি নয়। তা সত্ত্বেও আমরা একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখতে পাচ্ছি, যেখানে সরকার শেষ উপায় হিসেবে স্কুলগুলো বন্ধ করার পরিবর্তে শুরুতেই স্কুলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এটা কমিউনিটি ধরে ধরে বন্ধ করার পরিবর্তে দেশজুড়ে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং এর ফলে অব্যাহতভাবে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ, মানসিক-শারীরিক সুস্থতা ও সুরক্ষার ওপর ভয়াবহ রকমের প্রভাব পড়ছে। যখন স্কুলগুলো বন্ধ থাকে তখন শিশুরা তাদের শিক্ষা, সহায়তা ব্যবস্থা, খাদ্য ও নিরাপত্তা সেবা হারানোর ঝুঁকিতে থাকে, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রান্তিক শিশুরা, যাদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়। যেহেতু লাখ লাখ শিশু নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তাদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে রয়েছে এবং আরও অনেকে এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে ইউনিসেফের আশঙ্কা হচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়াই অনেক বেশি সংখ্যক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এবং স্কুলগুলোকে কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ১৯১টি দেশ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত ব্যবহার করে করা সাম্প্রতিক এক বৈশ্বিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্কুল খোলা বা বন্ধ- যাই থাকুক না কেন তার সঙ্গে কমিউনিটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হারের কোনো সম্পর্ক নেই। স্কুলগুলো থেকে ব্যাপক মাত্রায় সংক্রমণ ছড়ানোর খুব কমই তথ্য-প্রমাণ আছে এবং এ অবস্থায় ইউনিসেফ স্কুলগুলো পুনরায় খুলে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিতে এবং শিশুদের যথাসম্ভব নিরাপদে রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। স্কুল পুনরায় চালু করার পরিকল্পনার মধ্যে দূরশিক্ষণসহ শিক্ষা গ্রহণের বিস্তৃত সুযোগ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। এ ছাড়া ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলার জন্যও শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানানসই করে গড়ে তুলতে হবে। স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার জন্য ইউনেস্কো, ইউএনএইচসিআর, ডব্লিএফপি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিসেফের জারি করা কাঠামোতে জাতীয় ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ রয়েছে। এ নির্দেশনায় নীতিমালা সংস্কার; অর্থায়ন প্রয়োজনীয়তা; নিরাপদে কার্যক্রম পরিচালনা; ক্ষতিপূরণমূলক শিক্ষা; সুস্থতা ও সুরক্ষা এবং সবচেয়ে প্রান্তিক শিশুদের কাছে সেবা পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জেনকিনস বলেন, কোভিডের সময় আমরা স্কুলে পড়াশোনা করা নিয়ে যা জেনেছি তা একেবারেই পরিষ্কার: বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখার চেয়ে এগুলো খুলে রাখাই বরং বেশি উপকারী এবং যেকোনো মূল্যে দেশজুড়ে স্কুল বন্ধ রাখার বিষয়টি পরিহার করা উচিত।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন