নিজস্ব প্রতিবেদক : ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ দিন ধার্য করেন। এদিন পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এম আতিফ খালেদ আদালতে সাক্ষ্য দেন। এরপর তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আগামী ২৮ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। মামলার ১৮ সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর আগে ১৩ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-৪-এ বদলির আদেশ দেন। গত ১০ ডিসেম্বর আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক বেনজীর আহমেদ। এর আগে ৪ ডিসেম্বর কমিশনের সভায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন দেয়া হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) বর্তমানে কারাগারে আছেন, ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান ও একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা জামিনে আছেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক রয়েছেন। এ মামলা থেকে মৃত হিসেবে প্রমাণ মেলায় চার্জশিট থেকে এক আসামির নাম বাদ দেয়া হয়েছে। নতুন করে একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত বছরের ১০ জুলাই দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকায় মামলাটি করা হয়। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এ মামলার বাদী। ফারমার্স ব্যাংকের দুটি হিসাব থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে জালিয়াতির ‘প্রমাণ’ পাওয়ার তথ্য গত বছরের অক্টোবরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছিলেন কথিত ব্যবসায়ী শাহজাহান ও নিরঞ্জন। সেই টাকা রনজিৎ চন্দ্র সাহার হাত ঘুরে বিচারপতি এস কে সিনহার বাড়ি বিক্রির টাকা হিসেবে দেখিয়ে তার ব্যাংক হিসাবে ঢুকেছে বলে অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নামে দুদক। দুদক জানায়, সিনহার বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাই মাসে মামলা করে সংস্থাটি। মামলায় সাবেক ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে ভুয়া তথ্য দিয়ে অন্যের নামে চার কোটি টাকার ঋণ করে পরে তা এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগে বলা হয়, সেই ব্যাংক হিসাব থেকে পরবর্তী সময়ে টাকা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়। দুদক বলছে, মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে বিদেশে অবস্থারত এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয়া হয়। তদন্ত শেষে নতুন করে আসামি হয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের নিরীক্ষা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী)। উল্লেখ্য, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে বিদেশ থেকেই তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।