ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়ার রিপাবলিকান গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্পকে রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট, সিএনএন, বিবিসিসহ প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গতকাল জর্জিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেওয়ার আগে ট্রাম্প রাজ্য গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্পকে ফোন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এভাবে কোনো প্রেসিডেন্ট রাজ্য গভর্নরকে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য বলেছেন, তেমন কোনো নজির নেই। সংবাদমাধ্যমের বিবরণ অনুযায়ী, জর্জিয়ার গভর্নর জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর এ ধরনের অধিবেশন ডাকার কোনো আইনগত অধিকার নেই। সিএনএনের পক্ষ থেকে গভর্নর ব্রায়ান ক্যাম্পের অফিসে যোগাযোগ করা হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে গভর্নরের আলাপের কথা জানানো হয়েছে। গভর্নরের মুখপাত্র কোডি হল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গভর্নরের কী নিয়ে কথা হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নরকে রাজনৈতিকভাবে বিপাকেই ফেলছেন। গভর্নর ক্যাম্প বারবার বলে আসছেন, নির্বাচনের কাজে জড়িত রাজ্যের নির্বাচনী বোর্ড কোথাও কোনো কারচুপি বা জালিয়াতির প্রমাণ পায়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জর্জিয়ার ভোট প্রথম গণনার পর হাতে গণনার আবেদন জানান। দুই দফা গণনায়ও নির্বাচনের ফলাফলের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
এখন ট্রাম্প দাবি জানাচ্ছেন, ডাকযোগে আসা প্রতিটি ব্যালটের স্বাক্ষর যেন পরীক্ষা করা হয়। তিনি জর্জিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া বক্তৃতায় বলেছেন, লোকজন একই কালি দিয়ে অনেক ব্যালটে স্বাক্ষর করেছেন। মৃত লোকজন ভোট দিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীরা ভোট দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীকে জয়ী করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যারিজোনার গভর্নর ডাগ ডুসিকে একই কায়দায় চাপ দিচ্ছেন।
রাজ্যের ফলাফল বাতিল করে রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করার জন্য তিনি চাপ দিচ্ছেন। গভর্নর ডাগ ডুসি একইভাবে বলে আসছেন, তাঁর রাজ্যে ভোট গণনায় কোনো কারচুপির প্রমাণ তাঁদের কাছে নেই। এভাবে রাজ্যের আইনসভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার আহ্বানে তিনিও সাড়া দিচ্ছেন না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ৫ নভেম্বর জর্জিয়ার সিনেটরদের এক প্রচারণা সভায় বক্তৃতা প্রদান করেছেন। দিনভর ফেসবুক ও টুইটারে জর্জিয়া ও অ্যারিজোনার গভর্নরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। জর্জিয়ায় দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে জালিয়াতির ভুয়া দাবি উত্থাপন করে বলেছেন, ডেমোক্র্যাটদের মাধ্যমে আমেরিকা সমাজতান্ত্রিক যুগে প্রবেশ করবে। জনগণকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প বলেন, আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সন্তানেরা একটি স্বাধীন সমাজে বসবাস করবে কি না।
জর্জিয়া রাজ্যের দুটি সিনেট আসনে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজ্যের আইন অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী মোট ভোটের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোট না পেলে আবার নির্বাচন করতে হয়। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে রাজ্যের দুটি সিনেট আসনেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর অবস্থান ছিল খুব কাছাকাছি। উভয় দলের প্রার্থীই সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোট পাননি। আসছে ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ার এ দুটি সিনেট আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
ওয়াশিংটনের ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য সিনেটের এ দুই আসন এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উভয় আসন ডেমোক্র্যাট পার্টি ছিনিয়ে নিতে পারলে সিনেটে দুই দলের অবস্থান সমান সমান হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস পদাধিকার বলে একটি ভোট প্রদান করে ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে পারবেন।
রিপাবলিকান রাজ্য হিসেবে পরিচিত জর্জিয়ায় এবারের নির্বাচনে অল্প ভোটে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জয়লাভ করেছেন। সিনেটের নির্বাচন নিয়ে রাজ্যের দুটি নির্বাচনী এলাকায় ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সসহ রিপাবলিকান পার্টি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে আসন দুটি ধরে রাখার জন্য। জর্জিয়ায় ট্রাম্পের উপস্থিতই নির্বাচনে লড়া রিপাবলিকান প্রার্থীদের জন্য সহায়ক হবে কি না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।