ভুটানে ১০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ

ভুটানে ১০০ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভুটানের বাজারে ১০০টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হওয়ার পরও বাংলাদেশ এ সুবিধা পাবে। অন্যদিকে ভুটান বাংলাদেশের বাজারে ৩৪টি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে এ-সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষর হয়েছে। নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তি সই করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ভুটানের অর্থ-বাণিজ্যমন্ত্রী লোকনাথ শর্মা। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটান থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সংযুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প উন্নয়ন উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিনসহ বাণিজ্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ভুটান দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম স্বীকৃতি প্রদান করে। দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য এদিন ভূটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষরিত হলো। এর ফলে বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে মোট ১০০টি পণ্যে এবং ভুটান বাংলাদেশে মোট ৩৪টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে আরও পণ্য দু’দেশের তালিকায় সংযুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হবে। ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমান প্রাপ্ত বাংলাদেশের কিছু বাণিজ্য সুবিধা লোপ পাবে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ও নির্দেশনার ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকে ভুটানের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি সময়োপযোগী করা, পিটিএ এবং এফটিএ সস্পাদন করা হবে। এ লক্ষ্যে আরও ১১টি দেশের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতিদানের পর থেকে সুদীর্ঘ ৫০ বছর যাবত দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের অধিককর উন্নয়ন ঘটেছে। বাংলাদেশ এ বছর মুজিব শতবর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। আর এ সময় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে দু’দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক উন্নয়নে নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
ভুটানে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া ১০০ টি পণ্য
বাংলাদেশের পণ্যের মধ্যে রয়েছে- তৈরি পোশাক শিল্প, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী যেমন- জুস, কনডেন্সড মিল্ক, বিস্কিট, মিনারেল ওয়াটার, পাউরুটি, কৃষিজাত পণ্য যেমন- আলু, প্রসাধনী সামগ্রী, টয়লেট্রিজ পণ্য যেমন- সাবান ও শ্যাম্পু, শুঁটকি মাছ, সিমেন্ট, চা, ফ্লাইউড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য।
এ ছাড়া পুরুষদের জ্যাকেট, ব্লেজার, ট্রাউজার, আন্ডারওয়্যার, বাচ্চাদের পোশাক, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য ও গুর্ডস, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, অ্যালোমিনিয়াম ডোর, কাঠের তৈরি পণ্য, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফুটওয়্যার, ক্যাবলস, ঘড়ি, বেল্ট, মেটাল ও প্লাস্টিক ফার্নিচার ইত্যাদি শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে।
আর ভুটান থেকে বোল্ডার, জিপসাম, ডোলোমাইট, ফল ও জুস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য যেমন জ্যাম ও জেলি, মসলা, ফার্নিচারসহ অন্যান্য পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য। ডব্লিউটিও বিধি বিধান মেনে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক প্রিফারেন্টাল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) আলোচন বা নেগোসিয়েশন অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২-২৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখ ভুটানের সঙ্গে থিম্পুতে পিটিএ নেগোসিয়েশন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৬ জুন ২০২০ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সভায় খসড়া পিটিএ চুক্তি ও এর সঙ্গে সংযুক্ত রুলস অব ডিটারমিনেশন অব ওরজিন (আরও) নিজ নিজ দেশের অনুমোদনের পর স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। বিধি মোতাবেক চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর ডব্লিটিওতে নোটিফাই করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল ১২ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ শূন্য দশমিক ৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে ও একই সময়ে আমদানি করে ১২ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দু’দেশের বাণিজ্য ৫৭ দশমিক ৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এ সময় বাংলাদেশ রফতানি করে ৭ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, একই সময়ে ভুটান থেকে আমদানি হয় ৪৯ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন