নিজস্ব প্রতিবেদক : ছুটির দিন গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন ও ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা ছয় জন, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় সাতজন, রাজধানীতে দুইজন, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় একজন, গাজীপুরে একজন, বগুড়ায় এক শিশু, ভোলার সদর উপজেলায় একজন, হবিগঞ্জের বাহুবলে একজন, মাগুরায় একজন, নাটোরের সদর উপজেলায় একজন। আর ট্রেনের ধাক্কায় লালমনিরহাটে দুইজন, নরসিংদীতে একজন ও যশোরে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
টাঙ্গাইল: সকালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ইচাইল এলাকায় বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ছয়জন। মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মোজাফফর হোসেন জানান, উপজেলার ইচাইল এলাকায় বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহত ছয়জনের মধ্যে রয়েছেন ট্রাকের হেলপার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার শমসের হাট গ্রামের মো. রতন মিয়ার মিয়ার ছেলে মো. চুন্নু (৩২), একই উপজেলার ধলনাকান্দি গ্রামের জয়নাল হোসেনের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলাম (৩৪), একই গ্রামের পারভেজ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলামের (৬১) নাম জানা গেছে। বাকি তিন জনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তিনি জানান, এ দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে বাসের যাত্রী পিরোজপুর উপজেলার জাহাঙ্গীরবাগ গ্রামের রওশন আলীর স্ত্রী রেশমী বেগম (২০), একই উপজেলার কদরপাড়া গ্রামের রিপন মিয়ার স্ত্রী চন্দ্রনা, আশবাড়ী গ্রামের মো. পলাশ মিয়ার ছেলে মো. পারভেজ (১২), একই উপজেলার হরিরাম শাহাপুর গ্রামের এমদাদুলের ছেলে মো. রাশেদুল ইসলাম (২৭) ও রাজশাহীর বোয়ালী উপজেলার মতিয়া বিল গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে মো. হৃদয় মিয়ার (২২) নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে তিনজনের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. রেজাউল করিম জানান, রংপুর থেকে ছেড়ে আসা সেবা ক্লাসিক পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ইচাইল এলাকায় এসে বিকল হয়ে পড়ে। পরে মেরামতের জন্য বাসটি সড়কের পাশে দাঁড় করানো হয়। সকাল ৭টার দিকে ঢাকাগামী সবজি বোঝায় একটি ট্রাক বাসটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। এ সময় আহত হন অন্তত ১২ জন। আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
মানিকগঞ্জ: গতকাল শুক্রবার দুপুরে মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের মুলকান্দিতে বাস ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন সাতজন। দৌলতপুর থানার ওসি রেজাউল করিম জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের মুলাকান্দিতে বাস-অটোরিকশা সংঘর্ষে একই পরিবারের ছয়জনসহ নিহত সাত জন নিহত হয়েছেন। বাকী একজন সিএনজিচালক। নিহতরা হচ্ছেন- হরে কৃষ্ণ বাদ্যকার (৫০), তার ছেলে গোবিন্দ বাদ্যকার (২৬), পুত্রবধু ববিতা রানী (২৪), নাতনি রাধে রানী (৫), ভাইয়ের স্ত্রী খুশী রানি (৫২) ও ভাতিজা রায় প্রকাশ (৩০) এবং সিএনজিচালক জামাল শেখ (৩০)। বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ওসি রেজাউল করিম বলেন, দৌলতপুর থানায় লাশ রাখা হয়েছে। তিনি জানান, সিএনজিটা মানিকগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। বিপরীত দিক থেকে আসছিল মিনিবাসটি।
ঢাকা: রাজধানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ট্রাকের ধাক্কায় ইফতেখার ইফতি (১৮) নামের এক মেধাবী শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় তার বন্ধু ও নটরডেম কলেজের ছাত্র অনন্ত বড়ুয়া আহত হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে আসে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইফতি রাজার বাগ পুলিশ লাইন্স কলেজে এসএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আর অনন্ত নটরডেম কলেজে পড়াশোনা করছেন। ইফতি ও অনন্তর বাসা বাসাবো ও কদমতলায়। স্বজনদের বরাত দিয়ে ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, সকালে ইফতি ও অনন্ত মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রাবাড়ীর দিকে যাচ্ছিলেন। সকাল ১০টার দিকে মানিকদী এলাকায় পৌঁছলে তাদের মোটরসাইকেলটিকে দ্রুতগতির এক ট্রাক ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে আসে পুলিশ। পরে ইফতি মারা যান। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। অনন্তর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হওয়ায় তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নিহত ও আহতের স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব হাসপাতালে ছুটে আসেন। ঘটনার পর থেকে ট্রাকের চালক পলাতক রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে রাজধানীর মতিঝিলে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা সংঘর্ষে নুসাইবা আক্তার (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হয়েছেন আরও চারজন। গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে জীবন বীমা টাওয়ারের সামনে গোলচত্বরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে নিহত শিশুর ভাই জাকির হোসেন (২৩), তার স্ত্রী শিউলী আক্তার (১৯) ও নানী রওশন আরার (৬৫) নাম জানা গেছে। সিএনজিচালকের নাম জানা যায়নি। তার অবস্থা গুরুতর। মতিঝিল থানার ওসি (তদন্ত) মনির হোসেন মোল্লা জানান, সকালে জীবন বীমা টাওয়ারের সামনে গোলচত্বরে যাত্রীবোঝাই একটি অটোরিকশা ও আল-মক্কা নামে একটি বাসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজিতে থাকা পাঁচজন যাত্রী আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে নুসাইবা আক্তার নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। তিনি আরও জানান, ঘটনার পরপরই ঘাতক বাসটি জব্দসহ এর চালককে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই সিএনজিতে থাকা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে জানা গেছে। তারা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। এদিকে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। বাকিদের চিকিৎসা চলছে।
গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় কভার্ডভ্যানের চাপায় এক মোটর সাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি এ আর এম আল মামুন জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার নয়নপুর এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আরএকে সিরামিকস কারখানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সিরাজ মিয়া (৪৫) ময়মনসিংহের ভালুকা থানার জামিরদিয়া এলাকার মো. মইজদ্দিনের ছেলে। ওসি বলেন, সিরাজ মিয়া শ্রীপুরের মাওনার সিঙ্গারদীঘি এলাকা থেকে মোটর সাইকেলে করে ময়মনসিংহের গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে পেছন থেকে আসা একটি কভার্ডভ্যান মোটর সাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে সিরাজ ছিটকে পড়েন।এ সময় কার্ভাডভ্যানটি তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই সিরাজ নিহত হন। পরে পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার এবং কভার্ডভ্যানটি আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায় বলে জানান মামুন।
নাটোর: সকালে নাটোরের সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকায় নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসের ধাক্কায় মো. আলাল ফকির (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। হাইওয়ে পুলিশের ঝলমলিয়া ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজ শেষে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন আলাল ফকির। পথে হয়বতপুর এলাকায় মহাসড়ক পার হওয়ার সময় একটি বাস তাকে ধাক্কা দেয়। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নরসিংদী: নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জামতলা এলাকায় পিকআপভ্যান-শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে ইউসুফ আলী (৬০) নামে একজন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ইটাখলা-মঠখলা আঞ্চলিক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইউসুফ একই উপজেলার পোড়ানদিয়া এলাকার মৃত হাসান আলীর ছেলে। তিনি দুর্ঘটনাকবলিত নসিমন চালক বলে জানা গেছে। পুলিশ জানায়, দুপুরে যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশা ও নসিমন ইটাখলা থেকে শিবপুরের দিকে যাচ্ছিল। আর পিকআপভ্যানটি শিবপুর থেকে ইটাখলার দিকে যাচ্ছিল। অটোরিকশাটি উপজেলার জামতলা এলাকায় যাত্রী নামানোর জন্য থামলে পেছন থেকে নসিমনটি ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটির সঙ্গে অপর একটি পিকআপভ্যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় নসিমন চালক ইউসুফ পড়ে গেলে পিকআপভ্যান চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন। শিবপুর থানার উপপরিদর্শক মুরাদ হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ইটাখলা হাইওয়ে ফাঁড়িতে পাঠানো হয়েছে। আর দুর্ঘটনা স্থল থেকে অটোরিকশা, নসিমন ও পিকআপভ্যান জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
ভোলা: দুপুরে ভোলায় ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের বাংলাবাজার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে ট্রলির ধাক্কায় নিজাম উদ্দিন মিরন (৪৫) নামে এক মোটরসাইকেলআরোহী নিহত হয়েছেন। ভোলার বাংলাবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা জানান, দুপুরে মিরনসহ তিনজন মোটরসাইকেলে করে ভোলা শহরে যাচ্ছিলেন। ভোলা-চরফ্যাশন সড়কের বাংলাবাজার পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালামাল বোঝাই একটি ট্রলি তাদের ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই মিরন মারা যান। এ সময় আহত হন তার সঙ্গে থাকা অপর দুই আরোহী। তিনি জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলি জব্দ করা হলেও চালক পালিয়েছেন।
বগুড়া: গ্রামের রাস্তায় খেলছিল ৪ বছর বয়সী শিশু জাহিদ হাসান (৪)। এ সময় ধান বোঝাই অটো ভ্যানের চাপায় ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। গতকাল শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের বেলঘড়িয়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। জাহিদ হাসান বেলঘড়িয়া গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেনের ছেলে। স্থানীয়রা জানায়, জাহিদ হাসান অন্যান্য শিশুদের সাথে বাড়ির পার্শ্বে গ্রামের রাস্তায় খেলাধুলা করছিল। এ সময় ব্যাটারি চালিত একটি ধান বোঝাই অটো ভ্যান শিশুটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর পরি ভ্যান ফেলে রেখে চালক পালিয়ে যায়। নন্দীগ্রাম কুমিড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আজিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পরই ভ্যান চালক পালিয়ে গেছে। তবে স্থানীয় জনগণ ভ্যানটি আটক করেছে।
হবিগঞ্জ: বাহুবলে মাইক্রোবাস চাপায় আরশাদ আলী (৬০) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত?্যু হয়েছে। তিনি বাহুবল উপজেলার আব্দাপটষ্টিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি তফিকুল ইসরাম তৌফিক। তিনি জানান, দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বাহুবলের চারগাঁও এলাকায় বাইসাইকেল আরোহী আরশাদ আলীকে চাপা দেয় মাইক্রোবাসটি। গুরুতর আহত অবস্থায় আরশাদকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথে তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার মিরপুর বাজারের ব্যবসায়ী আরশাদ আলী বাইসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে মাইক্রোবাসটি তাকে চাপা দেয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক মাইক্রোবাসটি আটক করেছে। তবে চালক পলাতক রয়েছে।
মাগুরা: মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কের রামনগর ঠাকুরবাড়ি এলাকায় সবজিবোঝাই ট্রাক উল্টে স্বর্ণা বিশ্বাস (২৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো তিনজন গুরুতর আহত হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কের ঠাকুরবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত স্বর্ণা বিশ্বাস (২৫) মাগুরার শালিখা উপজেলার থৈপাড়া এলাকার মিল্টন মজুমদারের স্ত্রী। আহতরা হলেন একই পরিবারের সাথী বিশ্বাস (৩৫), সেতু বিশ্বাস (১২), অর্পণা বিশ্বাস (১৩)। রামনগর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহাজালাল বাবুল জানান, দুপুরের দিকে মাগুরা-ফরিদপুর মহাসড়কের ঠাকুরবাড়ী এলাকায় সবজিবোঝাই একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এ সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একই পরিবারের চারজন ট্রাকটির নিচে চাপা পড়ে। এতে স্বর্ণা বিশ্বাস ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরো তিনজন। আহতদের উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতরা মাগুরা সদরের রামনগর ঠাকুরবাড়ী গ্রামে আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল বলে জানান ওই ফাঁড়ি পরিদর্শক। ফাঁড়ির পরিদর্শক শাহাজালাল বাবুল আরো জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকটি জব্দ করে ফাঁড়িতে আনা হয়েছে। ওই নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জনের মৃত্যু: এদিকে গতকাল শুক্রবার ট্রেনের ধাক্কায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে লালমনিরহাটে দুইজন, যশোরে একজন এবং নরসিংদীতে একজন মারা গেছেন। জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মোটরসাইকেল আরোহীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার কাকিনা স্টেশনের বানীনগর শান্তিগঞ্জ রেলক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের সাদেক আলীর ইসলামের ছেলে মোটরসাইকেল আরোহী রাইসুল ইসলাম (২৫) এবং অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানান, সকালে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা বুড়িমারীগামী লোকাল ট্রেনটি কাকিনা স্টেশন অতিক্রম করে। পরে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক ক্রসিংয়ে অজ্ঞাত পরিচয় এক মানসিক ভারসাম্যহীন পথচারী ট্রেনটির নিচে কাটা পড়েন। অপরদিকে দুপুরে একই ট্রেন বুড়িমারী থেকে লালমনিরহাট ফেরার পথে একই এলাকার কাকিনা স্টেশন অতিক্রম করে বানীনগর শান্তিগঞ্জ বাজারের রেলক্রসিংয়ে রাইসুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি ছিটকে ট্রেনের নিচে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত রাইসুল ইসলাম কাকিনা বাজার থেকে নিজ বাড়ি উপজেলার দলগ্রামের ফিরছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা সাগর হোসেন (৩৬) জানান, দীর্ঘদিন ধরে কাকিনা রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি লালমনিরহাট রেলওয়ে থানাকে জানানো হয়েছে। লালমনিরহাট রেলওয়ে থানা পুলিশের ওসি বাহারুল ইসলাম ঘটনার সত্যাতা নিশ্চিত করে বলেন, রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে, নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়ে নজরুল ইসলাম (৬০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে হাটুভাঙ্গা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার খৈনকুড় এলাকার মৃত মোগল মিয়ার ছেলে। নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক শাহ আলম মিয়া জানান, সকালে হাটুভাঙ্গা রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় কিশোরগঞ্জগামী এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে নজরুলের মৃত্যু হয়। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্যদিকে যশোর শহরতলীতে একটি ‘অবৈধ’ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে খোলাডাঙ্গা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে রেল পুলিশের উপপরিদর্শক তারিকুল ইসলাম জানান। নিহত আবদুর রহমান (৪৫) যশোর সদরের মণ্ডলগাতি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জেলা শহরের ভোলাট্যালংক রোডে টাইলসের দোকান ‘এসএ ট্রেডার্স’ এর মালিক। এসআই তারিকুল ইসলাম জানান, মণ্ডলগাতি গ্রামের বাড়ি থেকে আবদুর রহমান যশোর শহরে আসছিলেন। খোলাডাঙ্গার ধোপাখোলায় ‘অবৈধ’ ক্রসিং পার হওয়ার সময় খুলনা থেকে কুড়িগ্রামের চিলিহাটিগামী রকেট ট্রেন তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এই হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ হোসেন জানান, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনের ধাক্কায় আহত আবদুর রহমানকে হাসপাতালে আনা হয়। তার মাথায় হেলমেট থাকলেও তিন স্থানে গভীর ক্ষত হয়। এ ছাড়া হাত-পাসহ শরীরের অন্যান্য স্থানের আঘাতও ছিল গুরুতর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান বলে তিনি জানান। লাশ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।