নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারী হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দাবি বাস্তবায়নে দুইদিনের আল্টিমেটামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। আগামীকাল সোমবারের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে ঘোষণা দিয়ে অবস্থান ছাড়েন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও আল মামুনের নেতৃত্বাধীন অংশের নেতাকর্মীরা। মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবিতে শাহবাগ মোড়ে রাস্তা আটকে অবস্থান নেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। পরে গণজমায়েত শুরু করেন তারা। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রথমে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে এসে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। কর্মসূচিতে মঞ্চের নেতারা বলেন, মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করতে হবে। মহানবী (সা:) ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার অপরাধে আজ থেকে সমগ্র বাংলাদেশে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার না করলে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সারাদেশে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিরোধিতাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর সারাদেশে এই দাবিতে একযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব-৭১ এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য প্রমুখ। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মহানবীকে (সা:) অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বিরোধিতাকারী মামুনুল-ফয়জুল গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙতে আসবে, আমরা তাদের হাত ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেব। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিকে কঠোরহস্তে দমন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, তুরস্কসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। মৌলবাদীরা ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য নিয়ে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। ইসলামের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য বৈধ। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের মূল উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার পতনের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। সময় এসেছে এদের লাগাম টেনে ধরার। সমাবেশের সাত দফা দাবিগুলো হলো-
১. মহানবী (সা.) কে অবমাননা ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করার অপরাধে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২. দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জেলা, উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করতে হবে।
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে বাংলাদেশে অবিলম্বে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং পবিত্র মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা বন্ধ করতে হবে।
৪. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৫. ধর্ষণের মতো বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
৬. মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
৭. সকল মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ভাস্কর শিল্পী রাশা, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বক্তব্য দেন। সমাবেশ চলাকালে শাহবাগে যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ তুলে নিলে এক ঘন্টা পর যান চলাচল স্বাভাবকি হয়।