নিম্ন-মধ্যমানের প্রকল্পে ব্যয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে উন্নয়ন কাজের স্থবিরতা কাটছে

নিম্ন-মধ্যমানের প্রকল্পে ব্যয়ের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে উন্নয়ন কাজের স্থবিরতা কাটছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাস প্রাদুভাবে বেশ কয়েক মাস ধরে নিম্ন ও মধ্যমানের প্রকল্পের যৌক্তিকতা ও মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বিবেচনা ছাড়া অর্থ ছাড় বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সরকার নিম্ন অগ্রাধিকার ৪৬০টি প্রকল্পের অর্থায়ন স্থগিত অবস্থান থেকে সরে এসেছে। ফলে ওসব প্রকল্পে আর অর্থ ব্যয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। পাশাপাশি মধ্যমানের প্রকল্প থেকেও শর্ত তুলে নেয়া হয়েছে। এখন থেকে সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি অংশের (জিওবি) ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা যাবে। আর প্রকল্পের বিদেশি সহায়তা একশ’ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ওই সিদ্ধান্তের আলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে উন্নয়ন কাজের স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রকল্পের অর্থ ব্যয় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর মাঠ পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে। ফলে প্রকল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজে যোগদান করছে। তাতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা কমছে এবং জীবনযাত্রায় ইতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি ওসব অঞ্চলে অর্থনীতির কার্যক্রম সচল হয়ে উঠছে। নানা দিক বিবেচনা করেই উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ছাড় ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ৫টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দের মধ্যে সরকারের অংশের ২৫ শতাংশ সংরক্ষণ রেখে বাকি ৭৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে নতুন প্রকল্পের জন্য সংরক্ষিত থোক বরাদ্দ বাদ দিয়ে হিসাব করতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় কাটছাঁট করে ২৫ শতাংশ অর্থ সংরক্ষণ ও সমন্বয় করতে হবে। চলতি অর্থবছরেই অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নির্ধারিত ওসব প্রকল্পের বিপরীতে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান রাখা সমীচীন রাখা মনে করছে সরকার। তবে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে পিএ অংশের পুরোপুরি অর্থ ব্যয় করা যাবে। তাছাড়া নিম্ন ও মধ্যমানের প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে ইতোপূর্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া পরিপত্র এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
সূত্র জানায়, করোনার কারণে সারা দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গত জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে আসে। আর তার নেতিবাচক প্রভাবে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেক মানুষই কর্মহীন হয়ে পড়ে। ঠিকাদারদের বিল আটকে যায়। ডিসেম্বরের মধ্যে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা সেগুলো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাতে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে যায়। প্রকল্পের টাকা ব্যয় বন্ধ করার পর নির্ধারিত অঞ্চলের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে বলে একাধিক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও এ সংক্রান্ত আবেদন অর্থ বিভাগে আসে। তাছাড়া সাপোর্ট টু ক্যাপিটাল বিল্ডিং অব বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, বিনিয়োগ প্রচার ও শিল্প উন্নয়ন বৃদ্ধি উৎপাদন-১ এবং উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড় করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রয়োজন সেগুলোর ক্ষেত্রে অর্থ ছাড় করতে পারে। সেজন্য সরকারের ওসব প্রকল্প শনাক্ত করতে একটি সমীক্ষা দরকার। না হলে গণহারে সব প্রকল্পে অর্থ ছাড় হলে আবারো চাপের মুখে পড়তে পারে সরকার। তাছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে অনেকের স্বার্থসংশ্লিষ্টতা থাকে। তাদেরও একটি চাপ রয়েছে। কারণ তারা শুরু থেকে প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিতের বিরোধিতা করছে। মূলত করোনায় স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তা মোকাবেলা করতেই সরকার কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটে।
অন্যদিকে এরই পরিপ্রেক্ষিতে সপ্তম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে করোনা মোকাবেলায় ব্যয় করা হবে। এ অনুশাসনের পর অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোকে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। ওসব হচ্ছে উচ্চ, মধ্যম ও নিম্নমানের। উচ্চমানের প্রকল্পের অর্থায়ন বন্ধ করা হয়নি। কিন্তু নিম্ন অগ্রাধিকার প্রকল্পে পুরোপুরি টাকা খরচের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। আর মধ্যমানের প্রকল্পের টাকা ব্যয়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প ওই নির্দেশের আওতার বাইরে রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির গতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। রাজস্ব আহরণ, আমদানি-রফতানি ও রেমিটেন্স পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো অবস্থানে যাচ্ছে। আর শিল্পে উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। এসব দিক বিবেচনা করেই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ইইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়ে অর্থ বিভাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে