নিজস্ব প্রতিবেদক : নিকট এক আত্মীয় করোনা আক্রান্ত হওয়ায় উত্তরার নিজ বাসায় ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিনি এক আলোচনা সভায় (ভার্চুয়াল) এ কথা জানান। এ দিন সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সশরীরে উপস্থিত না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ কথা জানান তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি দুঃখিত যে, আপনাদের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ এখন আমার বাসাতে করোনা ধরা পড়েছে। যার ফলে এখন ১৪ দিনের যে আইসোলেশন সেখানে আমাকে থাকতে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মির্জা ফখরুলের শ্যালক কাজী একরামুল রশীদের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। বর্তমানে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা এখন সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের সিনিয়র লিডার মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আমাদের মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসসহ অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক নেতাকে আমরা এই করোনায় হারিয়েছি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানসহ এরকম অনেক নেতাকে ইতোমধ্যে আমরা করোনার কারণে হারিয়ে ফেলেছি, বলেও তিনি আক্ষেপ করেন। ফখরুল বলেন, আমি অনুরোধ করবো সবাইকে, এখন একটা কঠিন সময়, একটা দুঃসময়। এই দুঃসময় আমাদের কিন্তু জাগ্রত হতে হবে, জেগে উঠতে হবে এবং জেগে উঠতে হবে মনের দিক থেকে। উচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পরেও সাদা পোশাকে পুলিশ যেসব নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গেছে, তাদের অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, অন্যথায় জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি হবে, সেই তরঙ্গ কিন্তু আপনাদের টিকিয়ে রাখতে পারবে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটু আগে আমি খবর পেলাম, আমাদের উত্তরার তুরাগ থানার সভাপতি-সম্পাদক গত বুধবার হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার পথে সাদা পোশাকে পুলিশরা তুলে নিয়ে গেছে। এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অহরহ ঘটছে এখন। আমি খুব স্পষ্ট করে সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন, অবিলম্বে মুক্তি দেন। তিনি বলেন, আমাদের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় নেত্রী খালেদা জিয়া আজ বন্দি, আমাদের তরুণ সম্ভবনাময় নেতা নির্যাতিত হয়ে মিথ্যা মামলায় বিদেশে অবস্থান করছেন। আমাদের ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। গুম হয়ে গেছেন প্রায় পাঁচশরও বেশি নেতাকর্মী। নিহত হয়েছেন সহস্রাধিক। গত কয়েকদিন আবারও গুম হয়েছেন ৩/৪ জন। তারেক রহমানের জন্মদিনে দলের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের নেতার জন্মদিনে কোনো উৎসব পালন করতে পারছি না। তার এ জন্মদিনে আমরা কেক কাটবো না। আজ আমরা তার জন্য দোয়া করবো। আল্লাহ যেন তাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন এবং তাকে সেই শক্তি দেন যে শক্তি দিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত করে বাংলাদেশের জনগণকে মুক্ত করতে পারেন। তিনি বলেন, আমাদের এ নেতার ওপর শুধু বিএনপি নয়, সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে রয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্ত হবে আরেকবার, মানুষ ফিরে পাবে তাদের অধিকার সেই আশা-ভরসা নিয়ে এদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। আমি দুঃখিত যে, আপনাদের এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ এখন আমার বাসায় করোনা ধরা পড়েছে। ফলে এখন ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে আমাকে। বাংলাদেশ ছাত্র ফোরাম ও উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের যৌথ উদ্যোগে তারেক রহমানের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে ও এম সাব্বির আহমেদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক চৌধুরী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের গোলাম সারোয়ার, ছাত্র দলের নাজমুল হাসান, মিজানুর রহমান শরীফ প্রমুখ।