নিজস্ব প্রতিবেদক : রাত আটটার মধ্যে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-দোকানপাট বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের ১০তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা অ্যাকাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা চাই ঢাকা শহরটিকে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিয়ে আসতে। আমরা রাত আটটার মধ্যে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান-দোকানপাট বন্ধ করতে চাই। আমরা মনে করি, ঢাকাবাসীর জন্য ঢাকা শহরে ৮টার মধ্যে দোকানপাট- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে আমাদের সমগ্র কার্যক্রম সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পারবো। যানজটমুক্ত হতে পারবো। আমরা সবাই পরিবার ও সন্তানদেরকেও সময় দিতে পারবো। সন্তানদেরকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সব বাবা-মাকে তার সন্তানদের সময় দেওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা রাত আটটা পর্যন্ত দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়সীমা নির্ধারণ করেছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ করে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজিয়েছি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত আমরা সব বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আমরা ঢাকাবাসী যখন সকালে উঠে কাজে যাবো, তখন রাস্তায় যেন কোনো বর্জ্য না দেখি সেলক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে চলেছি। ঘরবাড়ি দোকানপাট পরিষ্কার করে দয়া করে রাস্তার ওপরে, ফুটপাতে, উন্মুক্ত স্থানে এবং নর্দমায় ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। আপনারা বর্জ্য সংরক্ষণ করে রাখবেন আমাদের ওয়ার্ড ভিত্তিক কর্মীরা আপনাদের কাছ থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে। এডিস মশা নির্মূল প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, আগের সব গ্লানি মুছে দিয়ে আমরা ইতোমধ্যে মশক নিধন কার্যক্রমে সফলতা পেয়েছি। এই করোনা মহামারিতে আমাদের লক্ষ্য ছিল আর কোনো মানুষ যেন ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় মারা না যায়। আমরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে এবছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হতে দেইনি। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফলভাবে করতে পেরেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার অধিবাসীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, এডিস মশা নির্মূলে বাড়ির আঙিনা, ফুলের টব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পানি জমতে না দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমরা অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ রেখেছি, কারো বাড়িতে কিংবা আঙিনায় যদি এডিস মশার লার্ভা থাকে বলে সে মনে করে, তাহলে আমাদেরকে জানালে, কোনো জরিমানা ছাড়াই আমরা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেবো। কিন্তু আপনারা যদি নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখেন, আমাদেরকেও না জানান তাহলে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান রয়েছে, সেই আদালতের মাধ্যমে আপনাদের জরিমানা করা হবে। রাজধানীতে টয়লেটের অপ্রতুলতার বিষয়ে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ওয়ার্ডভিত্তিক কতগুলো গণশৌচাগার প্রয়োজন, কোন ওয়ার্ডে প্রয়োজনীয়তা বেশি, আমাদের প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা সমীক্ষা করে দেখছেন। প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে যেন অন্তত একটি গণশৌচাগার থাকে। যে সকল ওয়ার্ডে জনসংখ্যা বেশি, সাধারণ মানুষের যাতায়াত বেশি সেখানে একের অধিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের উন্নয়ন কার্যক্রম আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক প্রণয়ন করছি। আগে আমরা দেখছি একটি ওয়ার্ডে কি কি সাধারণ সেবা প্রয়োজন, সেগুলো নিশ্চিত করে আমরা বৃহত্তর স্বার্থে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করছি। আগামীকাল (আজ গতকাল বুধবার) যেহেতু বিশ্ব গণশৌচাগার দিবস, তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে যেন প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি গণ শৌচাগার নির্মাণ হয়। ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেট ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এই মার্কেটে ফুড কোর্টসহ অন্যান্য সুবিধাও থাকবে। এটি একটি আধুনিক মার্কেট হবে। মার্কেটের ভিতরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে যেন অত্র এলাকার সবাই সেখানে নামায পড়তে পারেন। এই মার্কেটটি আমরা এমনভাবে নির্মাণ করছি যেন কোন ধরনের যানজটের সৃষ্টি না হয়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বলেন, আমরা লক্ষ্য করি সিটি কর্পোরেশনের যে কোন মার্কেট নির্বাচনে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। অনেক মার্কেটের নির্মাণ কাজ ১৫ বছরেও শেষ হয়নি। এই মার্কেটের নির্মাণ কাজ দুই বছরেই সম্পন্ন করতে চাই। পর্যায়ক্রমে সকল মার্কেটের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে শেষ হয় আমরা সেই বিষয়ে লক্ষ্য রাখব। ঢাকার ঐতিহ্যকে মাথায় রেখে সেই আদলেই আমরা নকশা প্রণয়ন করেছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকনউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফি। এছাড়াও ডিএসসিসি মেয়র সাপ্তাহিক নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজিমপুর আধুনিক নগর মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ব সংলগ্ন গলি, সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও আইজি গেট পরিদর্শন করেন। এ সময় মেয়রের সাথে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিক প্রমুখ।