মানবেন্দ্র চক্রবর্ত্তী : সুর সম্রাজ্ঞী বাংলার তাজ মমতাজ। মমতাজের নামের অর্থ হচ্ছে সর্বৎকৃষ্ঠ। মমতাজ একটি আরবি শব্দ। এর শুদ্ধ উচ্চারন হলো মুমতাজ। এটি মূলত কর্ম বিশেষ্য। মমতাজ বেগম ৫ মে ১৯৭৪ সালে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে জন্ম গ্রহণ করেন। মমতাজের বাবা মধু বয়াতী ছিলেন বাউল শিল্পী। মমতাজ প্রথম জীবনে বাবা মধু বয়াতি,পরে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান এবং শেষে লোকগানের শিক্ষক আব্দুর রশীদ সরকারের কাছে গান শেখেন। বাংলা লোকগানের সংগীত শিল্পী এবং জাতীয় সংসদের তিন বারের সংসদ সদস্য তিনি। বাংলাদেশের সুর সম্রাজ্ঞী খ্যাত মমতাজ চার দশকের ক্যারিয়ারে ৭শ এর অধিক গানের এ্যালবাম বের হয়েছে।গান গেয়েছেন ১০ থেকে ১২ হাজার। মমতাজ বিশে^ সবচেয়ে বেশী গানের এ্যালবামের দাবিদার। মমতাজ সারাদেশে বিভিন্ন সংগীতানুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ গ্র্রহণ করেন। তিনি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে গান গেয়েছেন। তার গান ব্যাপক ভাবে সমাদৃত। মাটি ও মানুষের এই সুর সম্রাজ্ঞী ২০০৩ সালে গ্রিনীজ বুকে নাম লিখে বাংলাদেশের গৌরব বয়ে আনেন।এরপর শিক্ষাদূত, দৃষ্টিদূতও হয়েছেন। মমতাজ মাত্র ৪ বছর বয়সে মিরপুর শাহ আলীর মাজারে গান গায়। ’’আমি ভাবছিলাম কি এই হালে দিন যাবেরে সুজনও নাইয়ারে কত দু:খি রাধারে’’ ’’যে আমারে করে দেবে পাড় তাকে দেব গলার হার’’। বাবার সাথে মঞ্চে প্রথম এই গান গেয়ে উপস্থিত দর্শকদের সারা মেলে।গানে মুগ্ধ হয়ে দর্শকরা এই শিশু শিল্পীর দুহাতে বকশিষ তুলে দেয়। মমতাজ দেশের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সেরা পুরস্কার পান। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হচ্ছে ২০০৪ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা স্বর্ণপদক,২০০৩ মেরিল প্রথম আলো তারকা পুরুস্কার,বাসচাস পুরস্কার,রিপোর্টাস ইউনিটস এ্যাওয়ার্ড পুরুস্কার,ইন্দোবাংলা ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার,লন্ডনে এটিএন বাংলা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ও টেলিভিশন রিপোর্টাস এ্যাওয়ার্ড।
মমতাজ গত বছরের শেষে দিকে দুটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান দেশ বরন্য এই গুনি শিল্পী। একটি সেরা করদাতা হিসেবে আরেকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।এর আগে মমতাজ ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ সংগীত শিল্পী হিসেবে পুরুস্কৃৃত হয়েছেন। হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ’সত্তা’ সিনেমায় সেজুল হোসেনের লেখা ও বাপ্পা মজুমদারের সুরে ’না জানি কোন অপরাধে দিলা এমন জীবন,আমারে পোড়াইতে তোমার এত আয়োজন,আমারে ডুবাইতে তোমার এতো আয়োজন’গানটিতে কন্ঠ দেওয়ার জন্য মমতাজ দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। মমতাজ বলেন, সত্যি বলতে কি,গানটির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কারের যে স্বীকৃতি সেটা আমার কাছে মনে হয় দর্শকদের ভালবাসা। সাধারণ মানুষের ভালবাসা পাওয়ার জন্যে নিজ এলাকায় গড়া তার চক্ষু হাসপাতাল থেকে শুরু করে এমপি হিসেবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন তিনি।