সরকার সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে : ফখরুল

সরকার সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভোটকেন্দ্রে জনগণের উপস্থিতিতে। আমরা ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে দেখলাম, এত সন্ত্রাস! এত কারচুপি! এত ভয়ভীতি প্রদর্শন করার পরও সেখানে ১৪ শতাংশের বেশি ভোট তারা দেখাতে পারেনি। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু নির্বাচন নয়, তারা গণতন্ত্রও ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন একটা অযোগ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই কারণে দেখেছি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন ২৯ তারিখে হয়েছে। রাতের অন্ধকারে জনগণের অধিকার তারা লুট করে নিয়েছে। তারপর থেকে দেখেছি- যতগুলো নির্বাচন এই সরকারের অধীনে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়েছে; প্রত্যেকটা নির্বাচনে তাদের পক্ষে লুট করে নিয়েছে। তিনি বলেন, কী হাস্যকর কথা! কী লজ্জার কথা! প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন- বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আমেরিকা নির্বাচন কমিশনের থেকে উন্নত। কেন? কারণ তারা পাঁচ দিনেও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে পারে না সেখানে আমরা পাঁচ মিনিটের ফলাফল ঘোষণা করতে পারি। আপনারা তো পারবেন, কারণ আপনাদের ফলাফল আগে থেকেই তৈরি করা থাকে। সুতরাং আপনার সেটা ঘোষণা করে দেন। রাজধানীতে বাস পোড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত পরশুদিন আমরা দেখলাম রাজধানীতে ৯টি বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এই নাশকতার নিন্দা করেছি। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই বিএনপির কোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বিএনপির গণতন্ত্র বিশ্বাস করে বলেই এখনো প্রত্যেকটা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কেন নিচ্ছি? কারণ আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হবে। অন্য কোনোভাবে আমরা সরকার পরিবর্তনের কথা চিন্তাও করি না, ভাবিও না। কারণ আমাদের দল একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকার দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতা খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তিনি বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। এক লক্ষেরও বেশি মামলা দিয়ে আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এর কারণ একটাই, বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে এবং ভিন্নমতকে এখানে রাখা যাবে না। প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদ সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, কৃষকদলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম লিঙ্কন, হাফিজুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন প্রমুখ।
এদিকে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মির্জা ফখরুল। সেখানে তিনি অভিযোগে করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, মিথ্যা মামলার জন্য তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না। তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বলতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজনীতিকে নিজেদের মতো করে আয়ত্তে এনে বিরাজনীতিকরণে পরিণত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রিক আন্দোলন কোনো সহজ আন্দোলন নয় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিরোধীদলের চরম সংকট চলছে। আমাদের চরম নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে। ১/১১ মঈন উদ্দিন ও ফখরুদ্দিন সরকারের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগও কাজ করে যাচ্ছে। সেই একইভাবে মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা নিয়ে বিএনপিকে নির্মূলের করার ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র আন্দোলন কোনো সহজ আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এই আন্দোলন অনেক ত্যাগ-আত্মত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে। বাসে আগুনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কে বা কারা বাসে আগুন দিল। অথচ সেই আগের খেলায় সরকার লিপ্ত। তারা তাদের এজেন্টদের দিয়ে নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপায়, বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। কেউ এ ধরনের ট্র্যাপে পা দেবেন না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। নাশকতা যারা করছে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগসূত্র নেই। তাই এই ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানাচ্ছি। ফখরুল বলেন, বিএনপির ৩৫ লাখ নেতাকর্মী এখন প্রায় এক লক্ষাধিক মামলার আসামি। ৬০০ এর বেশি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সহস্রাধিক নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত নির্যাতিত হয়ে চলেছেন। এই অত্যাচার থেকে বেরিয়ে আসতে জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরুল আমিন রোকনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার, সাংবাদিক নেতা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিএফইউজের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে