সিলেট: আত্মগোপন করতে বেশভূষা পাল্টে ফেলেছিলেন রায়হান হত্যকাণ্ডের মূল হোতা এসআই (বরখাস্ত) আকরাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই খাসিয়া পল্লীর লোকজনই তাকে গ্রেফতারে সহায়তা করেছেন। কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকার খাসিয়া পল্লীতে লুকিয়ে ছিলেন আকবর। সেখানে খাসিয়াদের মতো পোশাক পরেন। মুখে দাড়ি রাখেন। পরনে খয়েরি রঙের ফুলহাতা শার্ট। নাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন কোমর। গলায় ঝোলানো পুঁতির মালা। পরিবর্তন আনেন চুলের স্টাইলেও। উদ্দেশ্য ছিল সময়-সুযোগমতো সীমান্ত অতিক্রম করার। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না। কেননা সেখানে ছিল কড়া নজরদারি। ফলে খাসিয়া পল্লীতে তাকে থাকতে হয়েছে বেশ কিছুদিন। একপর্যায়ে খাসিয়ারাই তাকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। ২৮ দিন পর গ্রেফতার হলেন আকবর। সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনার মূল হোতা এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়া। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, ডোনা সীমান্তে গভীর জঙ্গল দিয়ে আকবর পালানোর সময় সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে জনতা তাকে আটক করে। পরে রশি দিয়ে বেঁধে তাকে নিয়ে আসা হয়। আটকের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিমসহ একাধিক টিম তাকে জনতার হাত থেকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্থানীয় খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে প্রথমে আকবর আটক হন। এসময় নিজেকে বাঁচাতে তিনি কাঁদতে থাকেন এবং তাকে ছেড়ে দিতে অনুনয় বিনয় করেন। এসময় জনতা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন বলে পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন। সীমান্ত এলাকার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আকবর চেষ্টা করেছেন পালিয়ে থাকার। এ ক্ষেত্রে দেশে অনিরাপদ বোধ করায় তিনি বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগান, চেষ্টা করেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। এ উদ্দেশ্যে প্রথমে তিনি সীমান্ত এলাকায় পাড়ি জমান। সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের খাসিয়া পল্লীকেই বেছে নেন তিনি। আশ্রয় নেন ওই পল্লীতেই। ডোনা সীমান্তের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেপ্তারের সময় আকবর আগ বাড়িয়ে পুলিশকে নিজের পরিচয় দেন। এ সময় তার বেশভূষা অনেকটা খাসিয়া পল্লীতে বসবাসকারীদের মতো ছিল। গলায় পুঁতির মালাও দেখা যায়।সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।