নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও দৃষ্টিনন্দন দুটি গয়না নৌকা ভাসানো হয়েছে জাতীয় সংসদ লেকে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ লেকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তৈরি করা নৌকা দুটি ভাসিয়ে দেওয়া হয়। নৌকা ভাসানো কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আপাদমস্তকে একজন বাঙালি। তিনি বাঙালি জাতিস্বত্তা এবং সংস্কৃতিকে লালন করতেন এবং বাঙালির সংস্কৃতির মুক্তি এবং তা বিশ্বদরবারে তুলতে এদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তাই তার দলীয় প্রতীকও নৌকা। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এবং আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা এবং এদেশের সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে, প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এজন্য যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। বেমামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে রয়েছে সমৃদ্ধশালী ইতিহাস, ঐতিহ্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকা এদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি মৌলিক উপাদান। ঐতিহ্যবাহী নৌকাগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত নৌকা-বাইচ, নৌকা-মেলা এবং নৌকা জাদুঘর স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন নদীমাতৃক বাংলাদেশ নৌ-পর্যটন উন্নয়ন এবং আবহমান বাংলার নৌকাগুলোর ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস বলেন, নৌকা এবং নদীর সঙ্গে রয়েছে আমাদের সভ্যতা সৃষ্টির আত্মিক সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে নৌ-পর্যটন উন্নয়নে বাপক এর উদ্যোগে ট্যুরিস্ট ভেসেল সংগ্রহের কাজ চলছে। এ ছাড়া নৌকা এবং নদীকেন্দ্রীক সভ্যতাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে দরার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বলেন, আবহমান বাংলার হাজার বছরের সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো সংরক্ষণ এবং যথাযথ প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. জিয়াউল হক হাওলাদার। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং শামসুল হক চৌধুরী, বেসামিরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, স্থায়ী কমিটির সদস্য সৈয়দ রুবিনা আক্তার, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমান। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে দৃষ্টিনন্দন এ নৌকা দুটি তৈরিতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। নৌকা দুটি ২৭ ফুট লম্বা এবং পাঁচ ফুট চওড়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নৌকা দুটি তৈরি করা হয়। এর ডিজাইনও তিনি করেছেন। পরে প্রখ্যাত শিল্পী হাশেম খান চূড়ান্ত ডিজাইনটি করেছেন। তৈরির আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এটি দেখে সম্মতি দিয়েছেন। আরও জানা গেছে, মুজিববর্ষ চলাকালীন অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে নৌকা দুটি পরিচালিত হবে। পরবর্তীতে সংসদ সচিবালয় ও পর্যটন করপোরেশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। সংসদ ভবনের লেকে ভাসমান নৌকায় সাধারণ মানুষের ওঠার সুযোগ থাকছে না। ভিআইপি ও বিদেশি পর্যটকরা এ নৌকায় সংসদের লেক ভ্রমণ করতে পারবেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কৃষ্টি-কালচার ও ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরতে এই নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।