চারজনের সাক্ষ্য সম্পন্ন ফাহাদ হত্যা মামলায়

চারজনের সাক্ষ্য সম্পন্ন ফাহাদ হত্যা মামলায়

ঢাকাবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আরও দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- মামলার রেকর্ডিং কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন ও শেরে বাংলা হলের ক্যান্টিন বয় জাহিদ হোসেন জনি।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) ঢাকার দ্রুত বিচার-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে সাক্ষ্য দেন তারা। এ নিয়ে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৬০ সাক্ষীর মধ্যে চারজনের সাক্ষ্য সম্পন্ন হলো।

গত ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়। আগামী রোববার (১১ অক্টোবর) পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় আগামী ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মদিবসগুলোতে ধারাবাহিক সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর কথা ছিল। তবে ওইদিন আদালতে হাজির হয়ে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সময় চান। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বিচারক ৫ অক্টোবর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উশৃঙ্খল নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ। ঘটনার পরদিন নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

গত বছর ১৩ নভেম্বর মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পু‌লিশের (ডি‌বি) লালবাগ জোনাল টিমের প‌রিদর্শক মো. ওয়া‌হিদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

গ্রেফতার আসামিদের ম‌ধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকা‌রো‌ক্তিমূলক জবানব‌ন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

পরে গত বছর ১৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কায়সারুল ইসলাম। পরোয়ানা অনুযায়ী পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারায় গত বছর ৩ ডিসেম্বর তাদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর চলতি বছর ৫ জানুয়া‌রি পলাতক আসা‌মি‌দের হা‌জি‌রে বিজ্ঞ‌প্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞ‌প্তি প্রকা‌শের বিষ‌য়ে প্রতি‌বেদন দা‌খি‌লের এক‌দিন আগে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম না‌মে পলাতক এক আসা‌মি আদাল‌তে আত্মসমর্পণ ক‌রে জা‌মিন আবেদন ক‌রেন। আদালত জা‌মিন আবেদন নামঞ্জুর ক‌রে তা‌কে কারাগা‌রে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তাই এখন পলাতক থাকলেন আর তিন আসা‌মি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রা‌ফিদের নাম এজাহারে ছিল না।

চলতি বছর ১২ জানুয়া‌রি ঢাকার অতি‌রিক্ত মেট্রোপ‌লিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম মামলা‌র বিষয়ে পরবর্তী পদ‌ক্ষেপ নিতে মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদ‌লির আদেশ দেন। সরকা‌রি গেজেটের পর গত ১৮ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তরের আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনাল ৬ এপ্রিল মামলায় অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করলেও করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অভিযোগ গঠন শুনানি পিছিয়ে যায়।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

তারেক রহমান-সালামের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা বাতিল

আ. লীগসহ ১১ দলের রাজনীতি নিয়ে রিট চালাবেন না সমন্বয়করা