ঢাকা: পুরনো ঢাকার লালবাগে ৬ বছরের শিশু রিফাতকে অপহরণ করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরিফুর রহমান জুয়েলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৭ অক্টোবর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২এর বিচারক মুন্সী রবিউল আলম এ রায় দেন।
জুয়েলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ অর্থদণ্ডের টাকা ভিকটিমের পরিবারকে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ইকবাল মুন্সি ওরফে মেকার ইকবাল ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, হাবিবুর রহমান বিভিন্ন সময় রিফাতের বাবা রফিকুল ইসলামকে বসতবাড়ি কেনার প্রস্তাব দিতেন। রফিকুল ইসলাম এতে অস্বীকৃতি জানালে, আসামি তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। রফিকুল ইসলাম এলাকার লোকজন এবং আত্ময়-স্বজনদের জানান। ২০১৫ সালের ৯ জুন রিফাতের বাবা কর্মস্থলে চলে যান। রাত ৮ টার দিকে স্ত্রী তাকে ফোন দিয়ে জানান রিফাতকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ঘটনায় লালবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়। রাত সোয়া ১২ টার দিকে ফোনে অপহরণকারী রিফাতকে পেতে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীরা বিষয়টি র্যাব-পুলিশকে না জানানোর জন্য সতর্ক করে। রফিকুল ইসলাম বিষয়টি র্যাব-১০কে জানায়।
এদিকে অপহরণকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন রফিকুল ইসলাম। আজিমপুর মেটারনিটি হাসপাতালের সামনে ময়লা ফেলানোর জায়গায় সন্ধ্যায় ৪০ হাজার টাকা রেখে আসতে বলে তারা। এক অপহরণকারী টাকা নিতে আসলে র্যাব-পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। পরে অপর দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১১ জুন কামরাঙ্গীরচর থানাধীন বরিশুর গুদারাঘাট সংলগ্ন মধুমতি বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনে বুড়িগঙ্গা নদীর কিনার থেকে ভাসমান অবস্থায় বস্তাবন্দি রিফাতের লাশ উদ্ধার করা হয়।
পরে আরিফুর রহমান বলেন, ২০১৫ সালের ৯ জুন হাবিবুর রহমানের পরিকল্পনায় ইকবাল মুন্সীর সহযোগিতায় টেনিসবল এবং ফুটবল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আরিফুর রহমান জুয়েল শিশু রিফাতকে তার ঘরে নিয়ে যায়। পরে ফলের জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে আটকে রাখে। পরবর্তীতে মুক্তিপণের ১০ লাখ টাকা না পেয়ে তাকে হত্যা করে।
এ ঘটনায় রিফাতের বাবা রফিকুল ইসলাম ১১ জুন মামলাটি দায়ের করেন। ওই বছরের ৬ অক্টোবর পুলিশ তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ৩৫ সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।