ঢাকা: স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও দেশের সীমান্ত পিলারে পাকিস্তানের সংক্ষিপ্তরূপ ‘PAK’ লেখা সরানো হয়নি। টহলের সময় বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নজরে আসলে শুরু হয় সীমান্ত পিলারগুলো সংস্কারের কাজ।
এরপর একে একে সীমান্ত এলাকার ১০ হাজার ২৪০টি পিলার থেকে পাকিস্তানের নাম মুছে বাংলাদেশের নামের সংক্ষিপ্তরূপ ‘BD’ লেখা সম্পন্ন করেছে বিজিবি।
বুধবার (০৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বিজিবির পরিচালক (অপারেসনস) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান।
তিনি বলেন, একসময় আমাদের সীমান্ত পাকিস্তান-ভারত সীমান্ত ছিল। সে অনুযায়ী সীমান্ত পিলারে পাকিস্তানের নাম লেখা ছিল। তবে স্বাধীনতার এত বছর পরও অনেক সীমান্ত পিলারে পাকিস্তানের নাম লেখা রয়ে গেছে। আমাদের বিজিবির টহল টিম বিষয়টি প্রথমে নজরে আনে, তারা এগুলো সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। এরপর একে একে বিজিবির পক্ষ থেকে ১০ হাজার ২৪০টি পিলার থেকে পাকিস্তানের নাম মুছে বাংলাদেশ লেখা সম্পন্ন করা হয়। এর ফলে কোনো পিলারে আর পাকিস্তানের লেখা রইলো না।
সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু বিজিবি নয়, কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটাতে চায় না। আমাদের একমাত্র টার্গেট থাকে অপরাধীকে গ্রেফতার করা। গ্রেফতারের সময় অনেক অপরাধী আমাদের আক্রমণ করে, গুলি ছোড়ে, তখন আত্মরক্ষার্থে এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিএসএফের গুলিতে কতজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, সংখ্যাটি নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে রয়েছে। সম্প্রতি বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএসএফের মহাপরিচালককে এ বিষয়ে বলা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আপনাদের জবাব দিয়েছেন। এর পর থেকে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী সীমান্ত দিয়েই মাদক প্রবেশ করছে, বিজিবি আরও তৎপর হলে বিষয়টি ঠেকানো যেত- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা যিনি বলেছে, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত বা অভিমত হতে পারে। এটা পুলিশ সদরদপ্তরের বক্তব্য না। আমরা প্রায়ই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি পুলিশ সদরদপ্তরের সঙ্গে তথ্য বা মতামত শেয়ার করি। কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সাজেশন আসলে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করা হবে।
দেশের ৪ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা হাজির রয়েছে। সীমান্ত দিয়ে যেই মাদকই আসছে আমরা সেগুলো জব্দ করছি।
মাদক ব্যবসায় বিজিবি সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, রাষ্ট্রীয় আইনের পাশাপাশি বিজিবির নিজস্ব আইন রয়েছে। আমরা সেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে দায়িত্বপালন করি। তাছাড়া বিজিবি অনেকবার রিফর্মও করা হয়েছে। এটা বলতে পারি যে, বর্তমানে সীমান্তে মাদকের সঙ্গে বিজিবির সম্পৃক্ততা জিরো।
মিয়ানমারের রাখাইন সীমান্তে সে দেশের সেনাবাহিনীকে তাদের সশস্ত্র উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে দেখা গেছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির এ কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের কতটুকু উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা নিশ্চয়ই আরও ভালো জানেন। আমাদের সীমান্ত রক্ষার জন্য যতটুকু দরকার, ঠিক ততো পরিমাণ বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সীমান্তে আমাদের লোকজন সতর্ক রয়েছে। দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিজিবির বর্তমানে জনবল বেড়েছে, আমাদের অংশে যে দায়িত্ব রয়েছে, তার সর্বোচ্চটাই আমরা দিচ্ছি।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত আট মাসে দেশের সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে ৫ লক্ষাধিক অভিযান পরিচালনা করেছে বিজিবি। এসব অভিযানে সর্বমোট ৩৭২ কোটি ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকারের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
অভিযানে ২ হাজার ৬৩ জন চোরাকারবারীকে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ৩৪৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ৯৬ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৮১৫ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মণ কাজ বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও ৭৩টি আধুনিক কম্পোজিট বিপি নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে।