ঢাকা: বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প সম্প্রসারিত করে সদরঘাট পর্যন্ত নিয়ে আসতে বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, শহরের অভ্যন্তরে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে।
তাই নতুন করে জনদুর্ভোগ তৈরি না করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সড়ক পরিবহন দপ্তর প্রধানদের সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব আছে সেটাকে সদরঘাট পর্যন্ত নিয়ে আসার, আপতত মহাখালী। কিন্তু আমি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ এই একটি বিআরটির ধাক্কা আমরা সামলাতে পারছি না। আর শহরের কেন্দ্রস্থলে এই প্রকল্প আর দরকার নেই। আমাদের ছয়টি মেট্রোলেন হচ্ছে, ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলেছি- এখানে বিআরটির নতুন প্রকল্প মানেই জনদুর্ভোগ কয়েক বছরের জন্য চরম অবস্থায় ঠেলে দেওয়া।
ঢাকার যানজট নিরসনে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর রুটে দেশের প্রথম বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণে চীনের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চীনের গেজহুবা গ্রুপ ৮৫৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ২০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের জন্য ১৬ কিলোমিটার বিআরটি লেন, ৩২ কিলোমিটার ফুটপাত ও ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ করে দিচ্ছে।
কাদের বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা শুধু এ কাজটি করুন জনগণ দেখবে একটি কাজ অন্তত আপনারা করতে পেরে করেছেন। আবার কোনো কোনো দফতর প্রধান ডিটিসিএকে গুরুত্ব দিতে চায় না, এমন অভিযোগও পাই। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমি অবজার্ভ করি, আপনাদের সম্মানের দিকে লক্ষ্য রাখি। কেউই নিয়ম-কানুনের ঊর্ধ্বে নয়।
‘গাজীপুরবাসী, উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহগামী যাত্রীরা বছরের পর বছর কষ্ট করছে। সেখানে জনভোগান্তি চরমে। বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির (বিবিএ) অধীন অংশও খারাপ অবস্থায়। আমার মনে হয় এই মহাসড়ক নিয়ে আমাদের কিছু ভিন্ন কিছু ভাবতে হবে। বিবিএ না পারলে সড়কের মাধ্যমে সংস্কার কাজ করা যায় কিনা- সেটা ভেবে দেখতে হবে, জনগণকে আর কষ্ট দেয়াও যায় না। ’
আগামী ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবস উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, সড়ক নিরাপত্তা আমাদের কাজগুলো দৃশ্যমান করতে হবে। যেনতেনভাবে এ সব দিবস পালন করে কী লাভ। আমাদের দেশে দিবস ও সপ্তাহ পালন করতে করতেই অফিসিয়াল দিনগুলো চলে যায়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
তিনি বলেন, এবছর ২২ অক্টোবরের আগে সারাদেশের সব মহাসড়কে সাইন-সিগন্যাল এবং রোড মার্কিং স্থাপন করুন, এটি একটি দৃশ্যমান কাজ হতে পারে। সৃজনশীল কোনো উদ্যোগ যদি আমরা না নেই, তবে আমাদের বড় বড় কথা বলেও তো কোনো লাভ নেই। মানুষ কী চায় সেটা আমাদের বুঝতে হবে।
কাদের বলেন, বিআরটিএ’র কথা কী বলবো! সব অর্জন এক ড্রাইভিং লাইসেন্সের কারণেই প্রশ্নবিদ্ধ। প্রতিদিন শত শত রিকোয়েস্ট, আমি চেয়ারম্যান সাহেবকে বলবো দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করুন। প্রথমে অল্পকিছু হলেও সরবরাহ দিন। ব্যাকলগ যা আছে তা ক্লিয়ার করুন। অতিরিক্ত কাজ করতে হবে। আমি চেয়ারম্যানকে আবারও বলেছি শক্ত হাতে হাল ধরুন। প্রধানমন্ত্রী চান এ প্রতিষ্ঠানটি সত্যিকার অর্থে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হোক। বিআরটিএ যাতে হয়রানির কারণ না হয়।
‘সড়ক ও জনপথের নতুন ভবন হয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ভবন চলমান, বিআরটিএর শেষ হয়েছে। বিআরটিসির একটি নিজস্ব ভবন দরকার। এ বিষয়টি আমি ফিল করি। কিন্তু কর্মকর্তারা ফিল করেন কতটা বুঝি না।
ডিটিসিএর কোনো কাজ দৃশ্যমান নয় জানিয়ে তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই আর সমীক্ষা চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। আইনগত যে ক্ষমতা আছে সেটিও প্রতিষ্ঠানটি এক্সিকিউট করতে পারছে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অনেক স্থানে সড়কের জায়গা আছে, তাই বলে কি ভবনের পর ভবন তুলতে হবে! পুরো শহর জুড়ে সড়কের অফিস। যত প্রকল্প তত ভবন। আমি প্ল্যানিং শাখাকে বলছি, আর কোনো অযৌক্তিক ভবন প্রকল্পে ধরা যাবে না। সড়ক ভবনের দু’টি ফ্লোর বা একটি ব্লক প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত রাখুন। সেই ব্লকে থাকবে প্রকল্পের অফিস।