রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

মানিকগঞ্জ: চিকিৎসক সংকট থাকায় মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা চলছে ঝিমিয়ে। আর এতে করে প্রতিনিয়ত বহিঃবিভাগে স্বাস্থ্যসেবা নিতে এসে ঘুরে যেতে হচ্ছে রোগীদের।

তাই বাধ্য হয়েই সেসব রোগীদের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে সেবা নিতে হচ্ছে।

এ সংকট সমাধানে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করা হয়েছে তবু কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টির সুরাহা মিলছে না বলেও জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৮০ জন এবং বহিঃবিভাগে নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন হাজারের উপরে রোগী আসেন কিন্তু চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেশিরভাগ রোগীরা। কয়েক বছর আগে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও হাসপাতালে এখনো ১০০ শয্যায় যে চিকিৎসক থাকার কথা রয়েছে তার থেকেও কম। যার কারণে কোনো মতে দায়সারাভাবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ৪২ জন চিকিৎসকের বিপরীতে আছে ২৫ জন। এর মধ্যে মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ১২ জন ও কনসালটেন্ট রয়েছেন ১৩ জন। এদের মধ্যে তিন সিফটে এক জন করে চিকিৎসক জরুরি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেন এবং বাকিরা ভর্তি রোগী ও বহিঃবিভাগে রোগী দেখেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর কারণে কোনো ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। তার মধ্যে প্রতিদিন বহিঃবিভাগে হাজারের উপরে রোগীর ভিড়। প্রতিদিন রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে এবং চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরছেন। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে ভর্তি রোগীরাও সঠিক স্বাস্থ্যসেবা যেমন পাচ্ছেন না ঠিক তেমনি বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেও রোগীরা মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে ডাক্তার না দেখাতে পেরে অন্যত্র প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।

সদর উপজেলার ভাটবাউর এলাকার মজিদ বলেন, সকালে মাকে নিয়ে হাসপাতালে আইছি কিন্তু প্রচুর ভিড়। এ ভিড়ের মধ্যে কোনোমতে পারাপারি করে ডাক্তার দেখামু তাই বাধ্য হয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়া যাচ্ছি। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে পারলে আমার ভালো হতো। আমি গরিব মানুষ, প্রাইভেট হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গেলে অনেক খরচ লাগে। কোনো কুল কিনারা না পাইয়া প্রাইভেট হাসপাতালে মাকে নিয়া যাইতাছি।

দৌলতপুর থেকে আসা আছিয়া নামে আরো এক রোগী বলেন, আমি দৌলতপুর থেকে আইছি চর্ম ডাক্তার দেখাইতে কিন্তু এত মানুষের মধ্যে ডাক্তার দেখাইতে পারুম কিনা সেটাই ভাবছি। আগে যদি যানতাম এক ডাক্তারের পিছনে দুই তিনশ মানুষের সিরিয়াল তাইলে অন্য কোথাও ডাক্তার দেখাইতাম।

একই উপজেলার আরিফ নামে আরো এক রোগী বলেন, আমরা ছেলে মানুষ তাই ধাক্কা-ধাক্কি করে ডাক্তার দেখাতে পারছি। এখানে কোনো অসুস্থ মানুষ কিংবা বৃদ্ধ মানুষ এভাবে ডাক্তার দেখাতে পারবে না। এছাড়াও আরো একটি বড় সমস্যা রয়েছে টিকিট অনুযায়ী রোগীর নাম ডাকার পর কোনো কিছু ভালো করে বলার আগেই ওষুধ লিখে বললো সামনের সপ্তাহে আসার জন্য। ঠিক বুঝলাম না কিভাবে যেন দায়সারাভাবে রোগী দেখছেন তারা (ডাক্তার) ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক  বলেন, যে কয় জন চিকিৎসক থাকার কথা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তা নেই। এক দিকে রোগীদের বাড়তি চাপ আর অন্যদিকে বাইরে রোগী দেখার প্রবনতার কারণে অনেক সময় কোনো মতে দায়সারাভাবে রোগী দেখতে হচ্ছে আমাদের। এক জন রোগীর সঙ্গে কথা বলতে গেলে কম করে হলেও ১০ মিনিট কথা বললে তার রোগ সর্ম্পকে জানতে পারবো এবং সঠিক চিকিৎসা দিতে পারবো। কিন্তু রোগীর চাপ বেশি এবং ডাক্তার সংকট এ দুই নিয়ে কোনো মতে সব রোগী দেখার কারণেই অনেক সময় রোগীর সঠিক ট্রিটমেন্ট দিতে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হই।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আরশাদ উল্লাহ বলেন, গত কয়েক বছর আগে এ হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক রয়েছে ১০০ শয্যারও কম। বারবার চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিক এবং লিখিতভাবে বলেছি কিন্তু এখনো কোনো সমাধান হয়নি। এত অল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কোনোভাবেই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব না।

এছাড়া অধিকাংশ ডাক্তাররা মফস্বল এরিয়ায় দুই এক বছর ডাক্তারি করে বিভিন্ন ট্রেনিং, উচ্চ শিক্ষা কিংবা অন্য কোনো অজুহাতে জেলা শহর ছেড়ে পছন্দের জায়গায় পোস্টিং নিয়ে চলে যান। এ কারণেও জেলা শহরগুলোতে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন