সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে নববধূ গণধর্ষণের ঘটনার পর দুই রাত ও একদিন পর্যন্ত আত্মগোপনে ছিলেন মামলার এজাহারনামীয় ছয় আসামি। এর ঠিক পরবর্তী মাত্র ১৬ ঘণ্টায় ধরা পড়েন এজাহারনামীয় পাঁচ আসামি। এর মধ্যে চারজনকে এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে চার আসামির অবস্থান শনাক্ত হয়। এরপর কয়েকটি ঝটিকা অভিযানে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, গত শুক্রবার ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য রাতেই জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার সকালে এ ঘটনায় মামলা হয়। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই তিন ঘণ্টায় এমসি কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোন নম্বরে অসংখ্যবার কল আসে। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পুলিশ তার মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে। অতঃপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হয়। পরে একে একে ধরা পড়েন এজাহারভুক্ত চারজন আসামি।
সবার শেষে গতকাল রবিবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় আসামি রবিউল হাসানকে (২৮)। রাতেই তাকে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশনা, গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগের সমন্বিত অভিযানে রবিউলের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রাত নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে শনাক্ত করা স্থান থেকে রবিউল গ্রেফতার হন।
রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। গ্রেফতার এড়াতে সে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলো।
হবিগঞ্জে রবিউলকে ধরার প্রায় আধা ঘণ্টা আগে র্যাব-৯ আরেক অভিযানে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনিকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনীপাড়া গ্রামে। এর আগে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল পলাতক আরেক আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেফতার করে। অর্জুনকে গ্রেফতারের আগে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে গ্রেফতার করা হয় প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে। খেয়াঘাট থেকে দোয়ারাবাজার যাওয়ার পথে গ্রেফতার হন তিনি।
এদিকে, যে ছাত্রলীগ নেতার ফোন নম্বর ট্র্যাক করে চার আসামিকে পাকড়াও করা হয় সে ছাত্রলীগ নেতাই টিলাগড় ও এমসি কলেজ এলাকায় অভিযুক্তদের শেল্টার দিতেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। ওই ছাত্রলীগ নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই রবিউল-সাইফুররা অত্র এলাকায় নৈরাজ্য আর অরাজকতা চালাতো বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।