যমুনা নদীর পানি পঞ্চম দফা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
দফায় দফায় পানি বাড়ায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হওয়ায় বন্যাকবলিতদের ঘরের নিম্নাঞ্চল বেড়া, খুঁটি টিনে পচন ধরেছে। ঘরের ভেতরের মাটি সরে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ঘরের আসবাবপত্র খাট-চৌকি পঁচে যাচ্ছে। বন্যা কবলিতদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বন্যা কবলিতরা চরম কষ্টে দিনযাপন করছে। কিন্তু সরকারের সহায়তা ১০ কেজি করে চাল কিছু মানুষের একবারেই ভাগ্য জুটেছে। অনেকে এখনো বঞ্চিত রয়েছেন।
অন্যদিকে নতুন করে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আমন ধান, শাক-সবজি, মরিচ ও বাদাম নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সবজি নষ্ট হওয়ায় বাজারে সবজির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এদিকে পানি বাড়ায় চৌহালী-এনায়েতপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন বসতভিটা ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
চৌহালী এলাকার আব্দুল আজিজ জানান, পানি বাড়ার সময় আর কমার সময় নদী তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। চৌহালীর বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে।
চরমালসাপাড়া গ্রামের শাহেদ আলী জানান, দফায় দফায় বন্যা আমাদের জীবন একেবারে দুর্বিষহের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এতো কষ্ট আগে কখনো হয়নি। বাড়ি-ঘর নষ্ট হয়ে একেবারে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঘরে খাবার নেই-অর্থ নেই। সরকারি সহায়তাও নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব দিনযাপন করছি।
কাওয়াকোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, তৃতীয় দফা পানি কমার পর কৃষকরা আমন ধান, শাকসবজি ও বাদাম রোপন করেছিল। কিন্তু বন্যার পানি বাড়ায় সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে যমুনার অরক্ষিত অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে কৃষকরাও ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার নদী তীরবর্তী মানুষজন।
তিনি জানান, আরো ২৪ ঘণ্টা পানি বাড়বে, তবে বিপদসীমা অতিক্রম নাও করতে পারে।