ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হলো মাল্টা। ফলটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও বর্তমানে সমতল ভূমিতে চাষ করছেন কৃষকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মৌসুমি ফল লিচু, কাঁঠাল ও পেয়ারার পর এবার মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বারি-১ মাল্টা পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত চার বছর ধরে চাষ করে কৃষকরা। তবে মাল্টার আবাদ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে প্রথমে কিছুটা হতাশা কাজ করলেও ফলন ভালো হওয়ায় তাদের হতাশা কেটে যায়।
নানা প্রতিকূলতা অপেক্ষা করে এ এলাকার বেশিরভাগ অনাবাদি জমিতে লিচু, কাঁঠাল ও পেয়ারার পাশাপাশি মাল্টা চাষ শুরু হয়। কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর চাষ।
সরেজমিনে পৌর শহরের দুর্গাপুর, উপজেলার আখাউড়া উত্তরের চানপুর, আজমপুর, আনোয়ারপুর, কল্যাণপুর, দক্ষিণের হীরাপুর, কালিনগর, মোগড়া, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাগানে বাগানে দৃষ্টি নন্দন মাল্টা ধরেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা।
মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে এবং এটি পরিপক্ক হয়ে কমলা রঙ ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে প্রায় ৬ মাস। এরপর এটি বাজারজাত করা হয়।
স্থানীয় বাজার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে তা বিক্রি করা হয়। প্রতি বাগান থেকে ১৫-২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। যা স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের কৃষক মো. ইখলাছ মিয়া বলেন, ১২ বছর আগে তিনি বিদেশ যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে তেমন ভালো করতে না পেরে অবশেষে বাড়িতে চলে আসেন। এরপর বাড়ি সংলগ্ন পতিত জমিতে শুরু করেন লিচু, কাঁঠাল, পেপে, পেয়ারা ও লেবুসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ। এতে তিনি ভালো ফলন পেয়ে তার উৎসাহ যেন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ইখলাছ মিয়া বলেন, গত ৪ বছর আগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি ২ বিঘা জমিতে মাল্টা বারি-১ জাতের ১২০টি গাছ রোপন করেন। দুই বছরের মাথায় এসে সবগুলো গাছেই আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বর্তমানে তার বাগানে প্রতিটি গাছে ৯০-১২০টি মাল্টা ধরেছে। গত বছর তিনি ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। গত বছরের চাইতে এবার বেশি ফল এসেছে। গাছে ফলের সাইজ ভালো হওয়ায় ৪-৫টি মাল্টা ১ কেজি হয় । এ মৌসুমে ২ লাখ টাকার উপর মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
পৌর এলাকার দুর্গাপুরের মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, মাল্টা বারি-১ চাষ করছেন। তার বাগানে ১০০টি মাল্টা গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই ভালো মাল্টা এসেছে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এ বছর দেড় লাখ টাকার উপর বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাল্টা বারি -১ একটি উচ্চ ফলনশীল একটি সুস্বাদু ফল। সাধারণত জুন-জুলাই মাসে চারা রোপণ করতে হয়। প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ১০০ গাছ লাগানো যায়। মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মাথায় ফল পাওয়া যায়। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফুল আসতে শুরু করে। প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মাল্টা পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন। মাল্টার আবাদ আগামী দিনে অনেক বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করছেন।