সাম্প্রতিক সময়ে বন্ধঘোষিত খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। মিলগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে দুইটি মিলের মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ খুলনার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, বন্ধ ঘোষণার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে জেজেআই জুট মিল ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের কয়েক লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়ে গেছে। এই সব চুরির সঙ্গে পেশাদার চোর ও মিলগুলোর অসত্ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত রয়েছেন। তিনি বলেন, যদি সতর্ক না হয় তাহলে বাকি মালামালও চুরি হয়ে যাবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের সাবেক শ্রমিক মুরাদ হোসেন বলেন, ক্রিসেন্ট জুট মিলের নদী-তীরবর্তী এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। মিলটির নিরাপত্তার জন্য ১২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী লাগে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। যা দিয়ে মিলটির নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না।
সূত্রমতে, খুলনা অঞ্চলের পাটকলের মধ্যে আলিম জুট মিলে ২৫০টি, কার্পেটিং জুট মিলে ৮৬টি, ইস্টার্ন জুট মিলে ২৭৫টি, জেজেআই জুট মিলে ৪৬৬টি, প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলে ৯৫৭টি, স্টার জুট মিলে ৭৭০টি, খালিশপুর জুট মিলে ৯১টি, দৌলতপুর জুট মিলে ২৫০টি ও ক্রিসেন্ট জুট মিলে সর্বাধিক ১ হাজার ১৩৮টি তাঁত রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও মিলগুলোতে শত শত কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ মালামাল রয়েছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) মো. গোলাম রব্বানী বলেন, বন্ধের পর পাটকলগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য ৯৮ জন আনসার সদস্য ও বিজেএমসির ২৫৩ জনসহ ৩৯১ জন নিরাপত্তারক্ষী পাটকলের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও পাটকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রাতে নিয়মিত পাহারা দিচ্ছে। তিনি জেজেআই ও ক্রিসেন্ট জুট মিলের চুরির কথা স্বীকার বলে বলেন, দুইটি জুট মিলে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলের চোর ধরা পড়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২ জুলাই পাটকল বন্ধসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় শ্রমিকদের অবসায়নের প্রজ্ঞাপন প্রতিটি মিলের নোটিস বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়।