আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মীরা যতই হারিয়ে যাচ্ছে ততই শঙ্কিত হচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, ক্রান্তিকালে দুঃসময়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাকর্মীরা যতই হারিয়ে যাচ্ছে তখনই শঙ্কিত হই। কারণ আওয়ামী লীগকে দুঃসময়ে কর্মীরা টিকিয়ে রাখে। দলের দঃসমেয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কর্মীরা হারিয়ে যাচ্ছে। ১/১১ সময়ে কর্মীরা দলকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমরা নেতারা সবাই সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এটাই সত্য।
আজ দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। আওয়ামী লীগের প্রয়াত দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের স্মরণে জনতার প্রত্যাশা নামে একটি সংগঠন এই সভার আয়োজন করে।
অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ ১৭৯৫ সালে কিন্তু আমাদের ভেতরেই খন্দকার মোস্তাক ছিল। কাজেই আমি বলি, আমরা মাঝে মধ্যে লোক চিনতে ভুল করি। কারণ চেহারা সব মানুষেরই মতো। ১৯৭৫ সালে যারা সাচ্চা আওয়ামী লীগ দাবি করেছিলেন, তারা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রক্ত শুকাবার আগেই বঙ্গভবনে কিংবা রেডিও স্ট্রেশনে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, শুধু মাত্র ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে হত্যা করার জন্যই কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে আসলেন, তখন কিন্তু ঘাতকের দল বুঝতে পেরেছিলো বঙ্গবন্ধুর রক্ত বেঁচে আছে। সে কারণে শেখ হাসিনার উপর বার বার হামলা করা হয়েছে। সর্বশেষ বিএনপি সরকার আমলে খালেদা জিয়ার পরিবার ও তার সরকারের মদদে ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা চালানো হলো। শেখ হাসিনাকে প্রধান টার্গেট করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শুন্য করতেই এই হামলা চালানো হয়।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ক্রান্তিকাল আমাদের এখনো যায়নি। তরুণ প্রজন্মকে ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় পার্টি পালন করতো গণতন্ত্র দিবস হিসেবে, ধর্মীয় নামে গড়ে তোলা সংগঠনগুলো পালন করলো নাজাত দিবস হিসেবে। আর বিএনপি পালন করা শুরু করলো ভুয়া জন্মদিন হিসেবে। সেইসব লোকেরা কিন্তু এখন জাতির জনক বলে। আমি খুশি হই। কিন্তু তারা কী মন থেকে বলে!
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট পত্র পত্রিকার দেখলে বুঝতে পারবেন কে কি লিখেছিল। কে কি বলেছিল। সেই মানুষগুলো এখন আমাদের চারপাশে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দুটি ধারা। একটি আওয়ামী লীগ। আর বাকীগুলো এন্টি আওয়ামী লীগ। ভোটের সময় আওয়ামী লীগ ভার্সেস এন্টি আওয়ামী লীগ ভোট হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সময় যারা বলেছিলেন, দুই কুকুরের লড়াই। তারা কিন্তু বাংলার মাটি থেকে নিঃশেষ হয়ে যায় নাই। কখনো তারা খন্দকার মোস্তাক রূপে আবিভৃত হয়, কখনো জিয়াউর রহমান রূপে আবিভূত হয়। শেখ হাসিনার যখণ সুদিন থাকে না, তখন কত ফর্মুলা দেওয়া হয়। শেখ হাসিনার প্রতিকূল পরিবেশে দেশে ফিরে আসলেন। ১৯৯১ সালে দলের ভেতরে থাকা নেতারাই নানা কথাবার্তা বলেছেন।
মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের স্মৃতি চারণ করে আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি মোহাম্মদ নাসিমের মামলার আইনজীবী ছিলাম। সুপ্রীম কোর্টে, হাইকোর্টে আইনজীবি ছিলাম।
১/১১ সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, নেত্রী গ্রেফতারের আগে আমরা সুধাসদনের গেলাম। এফআর আর কপি দিলাম। নেত্রী পড়ে আশ্চর্য হলেন। বললেন, তারা আমার বিরুদ্ধে এসব লিখতে পারলো? এর দুদিন পর ১/১১ সরকার নেত্রীকে গ্রেফতার করে।
শেখ হাসিনার উদারতার কথা তুলে ধরে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, নেত্রী যখন জেল থেকে ছাড়া পাবে এ সময় আমি, মান্নান খান, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন একজন সচিবের বাড়িতে গেছিলাম। সচিব আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন এসেছি, বরিশাল বাড়ী। বরিশালইললা ভাষায় কিছু বললাম। পরে জিজ্ঞেস করলাম, শেখ হাসিনার নামে কোন ডিটেনশন আছে কিনা? সেই সচিব শুধু আমাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেননি। বাকী সবই করেছেন। শেখ হাসিনা সেই সচিবকে সবচেয়ে বড় সচিব করেছিলেন। সেই সচিবকে রাষ্ট্রদূত করে বিদেশ পাঠিয়েছেন শেখ হাসিনা পাঠিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার উদারতা।
জনতার প্রত্যাশার সভাপতি এমএ করিমের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, নুরুল আমিন রুহুল এমপি, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রনি, কুয়েত আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন, জনতার প্রত্যাশার মহাসচিব লায়ন মশিউর আহমেদ, রোকন উদ্দিন পাঠান, হুমায়ুন কবির মিজি প্রমুখ।