তিস্তাপাড়ে  ভাঙন থামছে না

তিস্তাপাড়ে  ভাঙন থামছে না

লালমনিরহাট: তীব্র ভাঙনে দিশেহারা লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ। গত চার-পাঁচদিনে তিস্তার পেটে বিলীন হয়েছে একটি গ্রামের ৭৫ পরিবারের ঘরবাড়ি, ঈদগাঁ ও ফসলি জমি।

হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা।

জানা গেছে, চলতি বছরের জুন থেকে থেমে থেমে বন্যার কবলে পড়ে তিস্তা নদীর বাম তীরে থাকা লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলা। বন্যার পানি কমতে শুরু করলে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। আগস্টের শেষ থেকে এ পর্যন্ত বড় বন্যা না হলেও তিস্তার পানি প্রবাহ ওঠা-নামা করছে। পানি কমলে ভাঙন শুরু হয়। তিস্তার ভাঙনে বাম তীরে থাকা লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলায়ই প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ঈদগাঁ, রাস্তা ঘাট, ব্রিজ, স্থাপনা ও ফসলি জমি। মাঝে মধ্যে ভাঙন তীব্র হয়। চোখের সামনে ভেসে যায় প্রিয় বসতভিটা ও আসবাবপত্র। ঘরবাড়ি সরানোর মতো সুযোগও পাচ্ছেন না কেউ কেউ।

জেলার পাঁচটি উপজেলায় ভাঙন দেখা দিলেও কয়েকদিন ধরে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিণ বালাপাড়া। গত চারদিনে গ্রামটির ৭৫টি বসতভিটা ও ঐতিহ্যবাহী আহলে হাদিস ঈদগাঁ মাঠ নদীগর্ভে চলে গেছে। গত ১৪ ও ১৫ সেপ্টেম্বর গ্রামটির ৩০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে গোবর্ধন ইসমাইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে গ্রামটির একমাত্র বিদ্যালয়টি ভেঙে যেতে পারে।

দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যর্থ হলে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ওয়াপদা বাঁধ) বিলীন হতে পারে। সিংঙ্গিমারী, পাসাইটারী গ্রামটি বিলীন হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি এখন ধাক্কা দিচ্ছে ওই বাঁধে। ফলে বাঁধটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধটি নদীগর্ভে চলে গেলে শত শত একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়বে কয়েক হাজার পরিবার ও সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু স্থাপনা। তিস্তা নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় অল্পতেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের মানুষ। তাই তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরি বরাদ্দ থেকে জিও ব্যাগের পাইলিং বাঁধের কাজ করা হলেও তার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ নদীপাড়ের মানুষদের। নদীর তীরে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে নদীতে ফেলা হচ্ছে। সপ্তাহ না যেতেই সেই জিও ব্যাগ গড়িয়ে পড়ে মেশিনের গর্তে গিয়ে ভরাট হচ্ছে। একই সঙ্গে নদীপাড়ে মেশিন বসানোর কারণে নদী ভাঙনও বেড়েছে কয়েক গুণ। যেখানে মেশিন বসানো হচ্ছে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই স্থানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ বালাপাড়ার আবু বক্কর ও মনসুর আলী বলেন, চোখের সামনেই সবকিছু ভেসে গেল। ঘরগুলোর টিন খুলে সরানো সম্ভব হলেও অনেক আসবাবপত্র তিস্তায় ভেসে গেছে। টিন খুলে রাস্তায় রেখেছি। জমি নেই বাড়ি করার। কোথায় যাব, আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

একই এলাকার শাহ আলম, সোলেমান আলী গোলজার  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনছি নদীর বাঁধ দেবে সরকার। সেই বাঁধ তো দূরের কথা, নেতাদেরও দেখা যাচ্ছে না। আমরা নদীতে ভেসে যাচ্ছি, কিন্তু মেম্বার-চেয়ারম্যান ও এমপি-মন্ত্রীদের দেখা নেই। আগে ভাঙন কবলিতদের টিন ও টাকা দিত সরকার। এবার সেই টিনও নেই। আমরা ত্রাণ চাই না, নদী খনন আর স্থায়ী বাঁধ চাই।

বসতভিটা হারিয়ে শত শত পরিবার রাস্তার ধারে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাস দেওয়া হলেও তা করা হচ্ছে না। গত মাসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও বরাদ্দ আসেনি। বরাদ্দ এলে বিতরণ করা হবে বলে জেলা ত্রাণ শাখা নিশ্চিত করেছে।

লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রেজাউল করিম  বলেন, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৭৫৯টি পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য টিন ও টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে, তা বিতরণ করা হবে। তবে প্রতিনিয়তই নদীর পাড় ভাঙছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাও প্রতিদিন বাড়ছে।

 

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন